বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

সাতক্ষীরায় সম্ভাবনাময় শুঁটকি শিল্প

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় সম্ভাবনাময় শুঁটকি শিল্প

সাতক্ষীরায় মিঠাপানির মাছ শুঁটকি শিল্পে অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। খেতে সুস্বাধু হওয়ায় সামুদ্রিক মাছের শুঁটকির পাশাপাশি দিনকে দিন মিঠাপানির মাছের শুঁটকির কদর বাড়ছে। সাতক্ষীরার উৎপাদিত শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন রপ্তানি হচ্ছে পার্শ¦বর্তী দেশ ভারতে। স্থানীয়রা বলছে যথাযথ তদারকি আর সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখানকার কার্পজাতীয় মাছের শুঁটকি রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বছরে কী পরিমাণ শুঁটকি সাতক্ষীরা থেকে উৎপাদিত হচ্ছে তার সঠিক তথ্য সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অধিদফতর জেলা অফিসে না থাকলেও স্থানীয় শুঁটকি উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছে বছরে প্রায় ১ হাজার টন শুঁটকি উৎপাদন করছেন তারা। এসব শুঁটকি মাছের মধ্যে রয়েছে কার্পজাতীয় মাছ সিলভার কার্প, মৃগেল, বাটা, তেলাপিয়া ও পুঁটি মাছ। প্রতি মণ শুঁটকির পাইকারি মূল্য ১৯ থেকে ২০ হাজার টাকা। তাতে ১ হাজার টন শুঁটকির আনুমানিক বাজার দাঁড়ায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা। ভারতের পাশাপাশি কার্পজাতীয় এসব মাছের শুঁটকি দেশের উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এবং চট্টগামে রপ্তানি হচ্ছে। ফলে একদিকে মাছ চাষিরা যেমন ভালো দাম পাচ্ছেন, অন্যদিকে শুঁটকি উৎপাদন করেও লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিসের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলার মোট ৭টি উপজেলায় ৬৩ হাজার জলাশয়ে (পুকুর, ঘের, খাল ইত্যাদি) ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে মিঠাপানির মাছ চাষ করা হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার টন। ২০০ টাকা কেজি দরে যার বাজারমূল্য ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। জেলা মৎস্য অফিসার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, কার্পজাতীয় মাছের শুঁটকি উৎপাদনে সাতক্ষীরার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জেলা থেকে বছরে বিপুল পরিমাণ মিঠাপানির মাছ উৎপাদন হয়। যা থেকে শুঁটকি উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করাও সম্ভব। তবে কী পরিমাণ শুঁটকি উৎপাদন হয় তার সঠিক তথ্য সংরক্ষণ নেই মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে। তবে শুঁটকি উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বছরে আনুমানিক ১ হাজার টন শুঁটকি উৎপাদিত হয় সাতক্ষীরা জেলায়। সাধারণত সিলভার কার্প, পুঁটি, মৃগেল, তেলাপিয়া ও বাটা মাছ।

তালা উপজেলার ত্রিশমাইল এলাকায় শুঁটকি ব্যবসায়ী নিপেন দাস ও খামার মালিক রমেশ চন্দ্র খাঁ জানান, তারা দুই বছরের বেশি সময় ধরে শুঁটকি মাছের আড়ত বানিয়েছেন। তিনি প্রতিমাসে ৪ হাজার কেজির মতো শুঁটকি বানিয়ে থাকেন। বিনেরপোতার আরও একজন স্থানীয়ভাবে কম দামের ছোট তেলাপিয়া দিয়ে শুঁটকি তৈরি করেন। এসব শুঁটকি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন পোলট্রি ও মাছের ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেন। সাতক্ষীরা বিনেরপোতা এলাকার শুঁটকি উৎপাদনকারী সাধন চন্দ্র রায় জানান, প্রতি মাসে প্রায় ৮ হাজার কেজি শুঁটকি মাছ উৎপাদন করেন। গত চার বছর ধরে তিনি শুঁটকি মাছ উৎপাদন করছেন। তিনি সাধারণত সিলভার কার্প, মৃগেল, বাটা, তেলাপিয়া ও পুঁটি মাছ কিনে বেতনা নদীর কাছে তার খামারে শুকিয়ে থাকেন। এসব শুঁটকি চট্টগ্রাম ও উত্তরবঙ্গের সৈয়দপুরে সরবরাহ করেন। প্রতি মণ শুঁটকির পাইকারি দাম ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা। শুঁটকি আড়তদার মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেন, সাতক্ষীরা থেকে শুঁটকি মাছ সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেন।

সর্বশেষ খবর