বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

শব্দদূষণ-ধুলায় ধুসর বুড়িমারী

দূর্বিষহ জনজীবন

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

শব্দদূষণ-ধুলায় ধুসর বুড়িমারী

উন্মুক্ত পাথরভাঙা মেশিনের বিকট শব্দ, সেইসঙ্গে ধুলা আর বালুতে আচ্ছন্ন পরিবেশ। এতে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরসহ আশপাশে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। অতিষ্ঠ এ স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী, পথচারী, শিক্ষার্থী, দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ সর্বস্তরের মানুষ। এ এলাকায় বসবাসকারীদের দেখা দিয়েছে নানা রোগের উপসর্গ। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বুড়িমারী শুল্ক স্টেশন (কাস্টমস) এলাকার বাইরে বুড়িমারী, ইসলামপুর ও উফারামারা মৌজার কিছু বসতবাড়ি ছাড়া প্রায় সব এলাকায় জমি ভাড়া নিয়ে মাঠ বানিয়েছে পাথর ব্যবসায়ীরা। ট্রাকবোঝাই পাথর এনে এসব মাঠে রেখে তা বিভিন্ন পরিমাপে ভাঙা হয়। এরপর আবার সেখান থেকে ট্রাকে বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। সেখানে পাথর আনা, বিকট শব্দে ভাঙা ও বিক্রয়ের প্রতিযোগিতা চলে। এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা জানান, স্থলবন্দর থেকে বুড়িমারী-পাটগ্রাম মহাসড়কের ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার ও আঞ্চলিক সড়কের প্রায় ৫ কিলোমিটারজুড়ে শত শত পাথরবাহী ভারতীয় ও ভুটানি ট্রাক দ্রুতগতিতে আসা-যাওয়া করে। ধুলায় এসব শিক্ষার্থীদের নাক-মুখ ঢেকে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। সেখানকার বাসিন্দারা শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, বুকে ব্যাথা, সর্দি, অ্যালার্জি, মাথা ধরাসহ বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। অনেকে শ্রবণশক্তির সমস্যায় পড়ছেন। বুড়িমারী হাসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মমিন ইসলাম জানায়, ‘মাত্রাতিরিক্ত ধুলা ও শব্দে অনেক সমস্যা হয়। স্কুল আসা-যাওয়ার সময় পোশাকে ধুলা পড়ে, ময়লা হয়। অস্বস্তি লাগে। মাঝেমধ্যে সর্দিকাশি হয়, মাথাও ধরে।’  আমানতুল্যা প্রধান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র লিখন ইসলাম জানায়- ‘মুখে মাস্ক পরে চলাচল করলেও ধুলা হতে রেহাই নাই। বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকার মকবুল হোসেন জানান, ‘স্থলবন্দর হতে মহাসড়ক ও এলাকার বিভিন্ন সড়কগুলোয় প্রতিদিন পাথরের অনেক গাড়ি ঢোকে, বের হয়। পাথর লোড-আনলোড, মেশিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাথর ভাঙা হয়। মাত্রাতিরিক্ত ধুলা আর শব্দে এ এলাকায় থাকাই যায় না। বাড়ির জিনিসপত্র ধুলায় ঢেকে যায়, অসুখ হয়।’  পাটগ্রাম আদর্শ কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ সহর উদ্দিন বলেন, ‘মানবসৃষ্ট বায়ু ও পরিবেশ দূষণ পরিবেশ অধিদফতরের দেখা উচিত। বায়ুদূষণ সবার জন্যই সমস্যা।’ পাটগ্রাম ইউএনও নুরুল ইসলাম জানান, ‘পাথরভাঙা মেশিন যথাযথ নিয়ম মেনে বসানো হয়েছে কি না, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র আছে কি না- এসব বিষয় আমরা দ্রুত দেখব। বায়ু ও শব্দদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’  

লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় জানান, ‘ধুলা-বালুতে শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, টিবি ও সিলিকোসিস রোগসহ নানা সমস্যা হতে পারে। শিশুসহ সবারই সমস্যা হতে পারে। শব্দদূষণে মাথা ও কানে সমস্যা হয়। শব্দ ও বায়ুদূষণ বন্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারে।’ 

সর্বশেষ খবর