রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা
পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত

খাল-নালা ময়লার ভাগাড়

এস এম রেজাউল করিম, ঝালকাঠি

খাল-নালা ময়লার ভাগাড়

ঝালকাঠি পৌর শহরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া ঝালকাঠি পৌরসভার অবকাঠামো রয়ে গেছে সেই মান্ধাতা আমলের। প্রথম শ্রেণির ঝালকাঠি পৌরসভার উন্নয়নের মান রয়ে গেছে তৃতীয় শ্রেণির। জেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল-নদী-নালা এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ঝালকাঠি পৌর এলাকায় স্থায়ী ময়লার ভাগাড় না থাকায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সুগন্ধা ও বাসন্ডা নদীতে আবর্জনা ফেলছেন। ঝালকাঠি পৌর শহর দিয়ে বয়ে চলা খাল ছিল ১১টি। এক সময় এ খালগুলো ঝালকাঠি শহরকে শোভামণ্ডিত করত। দখল-দূষণে এর অধিকাংশই অস্তিত্ব হারিয়েছে। যেগুলো আংশিক অংশ বেঁচে আছে, তাও গতি হারাচ্ছে। শহরের ফায়ার সার্ভিস-কলেজ রোড হয়ে চামটা খাল, চাদকাঠি-ব্রাক মোড় খাল, ফকিরবাড়ি থেকে শহরের বড় মাছ মাজার খালের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। একসময় এসব খাল দিয়ে নৌকায় চড়ে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যেতে হতো। যেসব খাল দিয়ে বড় বড় নৌকা যাতায়াত করত সেখানে এখন বহুতল ভবন, না হয় ডোবা। এখানে জন্ম নেওয়া মশা মাছিতে পৌর শহরবাসী অতিষ্ঠ।

পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঝালকাঠি পৌর শহরের ৯টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ টন বর্জ্য তৈরি হয়। এর মধ্যে পলিথিন ও প্লাস্টিকজাতীয় বর্জ্য থাকে প্রায় ৩৫ টন। ঝালকাঠি পৌর এলাকায় স্থায়ী কোনো ময়লার ভাগাড় না থাকায় পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সুগন্ধা ও বাসন্ডা নদীতে আবর্জনা ফেলছেন। এ ছাড়া আরও কয়েক টন গৃহস্থালি বর্জ্য বিচ্ছিন্নভাবে নালা-খালে ফেলা হচ্ছে। এতে শহরে সাতটি খাল ও অধিকাংশ নালা ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খালগুলোর দুই পাড়ের বাসিন্দারা সুবিধামতো তা ভরাট করে পাকা অবকাঠামো নির্মাণ করছেন। ঝালকাঠি পৌর শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বাঁশপট্টি খাল, থানার খাল ও জেলেপাড়া খালের ১০টি শাখা কয়েক বছর আগে পুনর্খনন করা হয়। আবারও তা দখল হয়ে যাচ্ছে।

শহরের বাসিন্দা ও বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর দাবি, নালাগুলো অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ধরনের নালা নির্মাণ না করে নিয়মিত খাল পরিষ্কারের পাশাপাশি খনন করে এর গভীরতা বাড়ানোর দাবি জানান তারা। একদিকে দখল-দূষণে বিলীন হচ্ছে খালগুলো, অন্যদিকে উন্নয়নের নামে প্রশস্ত ও গভীরতা কমিয়ে ডিপড্রেন করে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করায় এগুলো গতি হারাচ্ছে। এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠি পৌরসভা-সংলগ্ন থানার খালে বাঁধ দিয়ে ডিপড্রেন নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। ঝালকাঠি নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ আবু জাফর বলেন, ডিপড্রেন করে খালের দৈর্ঘ্য, প্রশস্ত ও গভীরতা কমানোয় সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরের বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়। পানি জমলে নালাগুলো থেকেও পানি সরানো যায় না। আবার প্রবহমান খালগুলোয় সারা বছরই পলিথিন ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। এ জন্য বর্ষা মৌসুম এলেই বাজারে পানি জমে থাকে। ঝালকাঠি পৌরসভা প্যানেল মেয়র তরুণ কর্মকার বলেন, খাল ও নালা পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে পৌরবাসীকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। আমাদের ৫০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী সড়ক ও নালা থেকে প্রায়ই বর্জ্য সংগ্রহ করেন। নিজস্ব ভাগাড় নির্মাণ হলেই সুগন্ধা ও বাসন্ডা নদীতে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করা হবে। তবে পৌর বাসিন্দারা সচেতন না হলে খাল-নালা পরিষ্কার রাখা কঠিন হবে। খাল দখল করে তারা নিজেদের ক্ষতি করছেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বেদখল হওয়া খাল উদ্ধারে অভিযানে নামা হবে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর