রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

ইজারা ছাড়াই নদীর বালু লুট

ভাঙনঝুঁকিতে ফসলি জমি বসতবাড়ি

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

ইজারা ছাড়াই নদীর বালু লুট

ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে তোলা হচ্ছে বালু -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ ও ফুলছড়ি উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও যমুনা নদী থেকে ইজারা ছাড়াই অবাধে বালু তোলা ও তীর দখলের উৎসব চলছে। এতে নদীর তীর, আশপাশের বসতবাড়ি, আবাদি জমি ও রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকবার ব্যবস্থা নেওয়া হলেও থামছে না বালুখেকোদের দৌরাত্ম্য। মাঝে মধ্যে বালু তোলা বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হয়। বালু ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর দুই-চারদিন পর স্থান পরিবর্তন করে আবার বালু তোলা শুরু হয়।

অবাধে বালু তোলায় তীরবর্তী বসতবাড়িসহ আবাদি জমি নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে। স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দফতরে আবেদন জানিয়েও ফল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর, গাইবান্ধা সদরের গোঘাট ও বারবলদিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, কোনো ইজারা ছাড়াই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছে নদীতীর। ক্ষমতাসীনদের সমর্থনে এসব এলাকায় ড্রেজার দিয়ে ও ব্রহ্মপুত্র নদের তলদেশে পাইপ ঢুকিয়ে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু তোলা ও নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। প্রভাবশালীদের নিয়ে গড়ে ওঠা একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এই বালু ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। সদরের গোঘাট নতুন বন্দর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গবরাবাড়ি এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীর দখল করে বালু স্তূপ করে রাখা হয়। সেখান থেকে বিক্রি করা বালু ট্রাক ও ট্রাক্টরে পাঠানো হয় বিভিন্ন স্থানে। বালু খোলা ট্রাকে পরিবহন ও স্তূপ করে রাখায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে এলাকাবাসী। সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদ ও গোঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ছয় থেকে সাতটি ড্রেজার দিয়ে, ওই এলাকায় অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। ওই এলাকার লোকজন জানায়, বালু সিন্ডিকেট প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। এতে একদিকে সরকার বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙন ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে নদীতে বিলীন হতে পারে তীরবর্তী বসতবাড়িসহ ফসলি জমি। সুন্দরগঞ্জের শ্রীপুর গ্রামের আবদুল খালেক, গাইবান্ধা সদরের সর্দারপাড়ার দুলা মিয়া, গোঘাট গ্রামের সাজু মিয়া বলেন, অনেকের বাড়িসহ জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এখন আবারও নদীভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে। সুন্দরগঞ্জের দক্ষিণ শ্রীপুর কেল্লাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত বালু তুলে তারা স্তূপ করে রাখেন নদীতীরে। এরপর সটকে পড়েন। তারা স্থানীয়দের বাধা মানেন না। উল্টো বালু ব্যবসায়ীদের হুমকিতে এলাকাবাসীই অসহায়। ওই এলাকার বাসিন্দা রাজু মিয়া বলেন, কিছু বলতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়। সেই ভয়ে কেউ কিছু বলে না। গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, ‘ওই এলাকায় বালু তোলার জন্য আমি অনুমতি দিইনি। বালু শ্রীপুর থেকে এনে কাজ টাজ করে, এই আরকি, তেমন কিছু নয় এটা।’ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজহারুল ইসলাম তার এলাকায় বালু উত্তোলন করা হয় স্বীকার করে বলেন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লোকজন বালু তোলে। কয়েকবার তাদের জরিমানাও করা হয়েছে। বিষয়টি জানতে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুলকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, বিষয়টি যাচাই করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর