রবিবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

জলে যাচ্ছে ২৪২ কোটির প্রকল্প

বাগেরহাটে বেড়িবাঁধে ভাঙন, কাজ অসম্পন্ন রেখে হস্তান্তরের অভিযোগ

বাগেরহাট প্রতিনিধি

জলে যাচ্ছে ২৪২ কোটির প্রকল্প

শরণখোলায় বলেশ্বর নদীশাসন বাঁধে ধস -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জে বলেশ্বর নদীশাসন বেড়িবাঁধে একাধিক স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। অনেক স্থানে ব্লক ধসে পড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীন ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ অসম্পন্ন রেখেই তা হস্তান্তর করা হয়েছে। এ কারণে বাঁধে ভাঙন ও ব্লক ধসে পড়ছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। বর্ষা মৌসুমের আগেই বলেশ্বর নদীশাসন বেড়িবাঁধের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছেন তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, বেড়িবাঁধে ভাঙন, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো ও নদী তীর রক্ষা কাজ বাস্তবায়নে একটি প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সিডরে মৃত্যুপুরী শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জের মানুষ বাঁচাতে ২০১৫ সালে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের (সিইআইপি) অধীনে ৩৫/১ পোল্ডারের বলেশ্বর নদী তীরে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ শুরু করা হয়। ২৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই কাজ বাস্তবায়ন শুরু করে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘দি ফার্স্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো হেনান ওয়াটার কনজারভেন্সি’। প্রতিষ্ঠানটি এ কাজ বাস্তবায়নকালে শরণখোলার বগী, গাবতলা, মোরেলগঞ্জের আমতলা, ফাসিয়াতলাসহ সাতটি স্থানে ভাঙন ও বাঁধের ব্লক ধস দেখা দেয়। এদিকে কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন না হলেও ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে এই বেড়িবাঁধ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিআইপি প্রকল্পের কর্মকর্তারা বুঝে নেন। এই অবস্থায় বাঁধের একটি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর জরুরিভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু করে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড। শরণখোলার সাউথখালী ইউপি সদস্য রিয়াদুল পঞ্চায়েত ও গাবতলার জাকির হোসেন জানান, ২০০৭ সালে সিডরে পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছি। বলেশ্বর নদীতে ভাঙনে ভিটা-বাড়ি হারিয়েছি। এরপর আমাদের একমাত্র দাবি ছিল, টেকসই বেড়িবাঁধ। কিন্তু বাঁধে শুরু থেকেই বালু দিয়ে নিম্নমানের কাজ করা হয়েছে। এ ছাড়া নদীশাসন না করায় বাঁধের ব্লক ধসে পড়ছে। তিন কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। বেড়িবাঁধে নতুন করে ভাঙন দেখা দেওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান রায়হান উদ্দিন শান্ত জানান, বেড়িবাঁধ নির্মাণ শুরু হওয়ায় মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছিল। কিন্তু তা অসমাপ্ত রেখেই কেন্দ্রীয়ভাবে তা হস্তান্তর করা হয়েছে। স্থানীয় দফতরের সঙ্গে সমন্বয় না করে কাজ করায় তারাও তা তদারকি করতে পারেনি। কাজ অসমাপ্ত থাকায় বাঁধে ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে এলাকাবাসীর স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সিআইপি প্রকল্পে নদীশাসন না করেই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এখন তা হুমকির মধ্যে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল বিরুনী জানান, ২০২৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়েছে বলে তা ঢাকায় হস্তান্তর করা হয়। প্রকল্পটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হতো। পরে সরেজমিন পরিদর্শন করে সাতটি স্থানে দুই দশমিক ৬৮ কিলোমিটারে বাঁধ অতি ঝুঁকিপূর্ণ পাই। নদীর তীর প্রতিরক্ষামূলক কাজ বাস্তবায়নের জন্য ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এটি পাস হলে নদীশাসন করে বাঁধে ভাঙন রোধ করা হবে।

সর্বশেষ খবর