শিরোনাম
শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

আগাম সতর্কতা না পাওয়ায় শত শত পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার লালমনিরহাটে নেই

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

কৃষি অর্থনীতির জেলা লালমনিরহাট। এ জেলার অধিকাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। হিমালয়ের কাছে হওয়ায় উত্তরের হিমেল বাতাসের কারণে প্রতি বছর শীত মৌসুমে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় এ অঞ্চলে বেশি শীত পড়ে। বর্ষা মৌসুমেও অধিক বৃষ্টির কারণে বন্যার কবলে পড়তে হয় এ জেলার মানুষকে। অথচ শীত বা বৃষ্টির পূর্বাভাস জানার জন্য এখানে নেই কোনো আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে লালমনিরহাট জেলা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ-পূর্বদিকে বিস্তৃত। যা প্রায় ১০০ কিলোমিটার লম্বালম্বি। এমন অবস্থানের কারণে গোটা জেলার এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলার তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতে তারতম্য ঘটতে দেখা যায় অনেক সময়ই। স্থানীয়রা জানান, শুধু কৃষি নয়, শ্রমজীবী বা অন্য যে কোনো পেশার মানুষের জন্য আবহাওয়ার আগাম বার্তা জানা এখন জরুরি। একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি আনিছুর রহমান বলেন, চাকরির প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের ওপর সেই ভ্রমণ অনেকখানি নির্ভর করে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা থাকলে পরিকল্পনামাফিক কাজ করা যায়। সদর উপজেলার ফুলগাছ গ্রামের আদর্শ কৃষক লিটন মিয়া বলেন, শীতকালীন সবজি আবাদের সময় কুয়াশা, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, গড় বা সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিংবা শৈত্যপ্রবাহের খবর আগাম জানা গেলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। বিশেষ করে আলু, ফুলকপি আবাদে তাপমাত্রা কম থাকলে যেমন ফলন ভালো পাওয়া যায়, তেমনি শীতকালীন বৃষ্টি ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ছত্রাকের আক্রমণে ফলন কমে যেতে পারে। এ কারণে স্থানীয়ভাবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস নিয়মিত থাকা উচিত। হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধির ওপর এ অঞ্চলের বন্যা নির্ভর করে। শুধু আগাম সতর্কতা না পাওয়ায় প্রতি বছর শত শত পরিবার বন্যা-নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অথচ এ জেলাতে নেই কোনো আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। কৃষিবিদদের মতে, তিস্তা ও ধরলা নদীবেষ্টিত এ জেলা কৃষিনির্ভর। এখানে শীত মৌসুমে যেমন শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো জানা প্রয়োজন, তেমনি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে সম্পর্কিত ও বন্যাসহ অন্যান্য বিষয়গুলোর আগাম সতর্কবার্তা জানা জরুরি। কৃষিবিদ আলীনূর রহমান বলেন, উদ্ভিদের জন্য আবহাওয়া এবং জলবায়ুর উপাদানগুলো প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।

যে কোনো ফসলের জন্য সংশ্লিষ্ট স্থানের গড় তাপমাত্রা, বাতাসের আর্দ্রতা বা জলীয়বাষ্পের পরিমাণ, বৃষ্টিপাত, আকাশে মেঘের অবস্থান বিষয়গুলো অতি গুরুত্বপূর্ণ। আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানা থাকলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি রক্ষায় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র কৃষির জন্য প্রয়োজন আছে। জেলার কালীগঞ্জে এরকম একটি পর্যবেক্ষণাগার তৈরির কাজ চলমান আছে। তবে কবে নাগাদ সেটা চালু হবে তা সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি তিনি।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সঙ্গে আমি কথা বলব, তাদের চাহিদা থাকলে নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট দফতরে এ ব্যাপারে চিঠি পাঠানো হবে।

 

সর্বশেষ খবর