শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

দেড় শ অবৈধ ইটভাটা, পুড়ছে কাঠ

ক্ষতির শিকার হচ্ছে তিন ফসলি জমি

জাহিদুজ্জামান, কুষ্টিয়া

দেড় শ অবৈধ ইটভাটা, পুড়ছে কাঠ

কুষ্টিয়া সদরের লক্ষ্মীপুরে ইটভাটায় কাঠের লাকড়ি (খড়ি) দিয়ে ইট পোড়ানো হচ্ছে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ১৭০টি ইটভাটায় পুড়ছে কাঠ। পরিবেশ অধিদফতরের হিসাবে এর প্রায় দেড় শটিই অবৈধ। ভাটার কারণে ক্ষতির শিকার হচ্ছে মাঠের তিন ফসলি জমি। 

পরিবেশ অধিদফতর কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক সিনিয়র কেমিস্ট হাবিবুল বাশার জানান, জেলায় ১৭০টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ২২টির ছাড়পত্র আছে। বাকি দেড় শটি চলছে একেবারেই অবৈধভাবে। এ বছর এখনো পর্যন্ত কুষ্টিয়ার কোনো ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়নি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে অভিযান বাধাগ্রস্ত হয়েছে জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনকালীন ব্যস্ততার কারণে ম্যাজিস্ট্রেট পাওয়া যায়নি। ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছি, সামনের সপ্তাহ কিংবা তার পরের সপ্তাহে অভিযান চালানো হবে। তবে চলতি মৌসুমের শুরুতেও একই কথা বলেছিল পরিবেশ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। তখন বলা হয়, অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালানোর ক্ষেত্রে নির্বাচন কোনো বাধা হবে না। শিগগিরই অভিযান শুরু হবে।

কুষ্টিয়া পরিবেশ ক্লাবের সভাপতি রাশিদুল ইসলাম বিপ্লব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অবৈধভাবে কৃষিজমিতে গড়ে তোলা হয়েছে বেশির ভাগ ভাটা। এগুলোতে কয়লার বদলে গাছ কেটে পোড়ানো হচ্ছে। ইট তৈরি করতে কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর মাটি ব্যবহার করছে। আমরা বারবার বলার পরও প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছে। এ ব্যাপারে পরিবেশবাদী খলিলুর রহমান মজু বলেন, সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সঠিকভাবে অভিযান চালিয়ে ভাটাগুলো নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আনা সম্ভব। অভিযোগ আছে, অন্য বছরের মতো এবারও প্রশাসন ম্যানেজ করতে জোটবদ্ধ হয়েছেন ভাটা মালিকরা। তবে এ বছর কোনো সমিতি গঠন করেননি তারা। উপজেলাভিত্তিক এক-দুজন নেতৃত্ব দিচ্ছেন।  কুষ্টিয়া ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, ইটভাটা মালিকদের এ বছর কমিটি নেই। কুষ্টিয়া জেলায় কোনো সমিতিও এখন নেই। এ বছর উপজেলাভিত্তিক চলছে। এ বিষয়ে হাবিবুল বাশার বলেন, এসব অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট ও অসত্য। ১৭০টি ভাটার বিরুদ্ধে একসঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। তবে নিয়মিত অভিযান দ্রুতই চালানো হবে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটায় অবাধে কাঠ পোড়ানোর বিষয়টি একেবারে প্রকাশ্য। কুমারখালী উপজেলার চরসাদীপুরের এএফবি ইটভাটার ম্যানেজার নাম না বলে জানান, কয়লার দাম বেশি তাই গাছ কেটে পোড়াতে হচ্ছে। কয়লার দাম সরকার কমিয়ে দিলে কাঠ পোড়ানো বাদ দিয়ে দেব। আরএইআরবি ইটভাটার ম্যানেজার বলেন, সরকার লাইসেন্স দিচ্ছে না।

কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা বলেন, ইটভাটা যদি প্রচলিত আইনের বিরুদ্ধে কাজ করে, আইনের যে ধারাগুলো রয়েছে, সেগুলো প্রতিপালন না করে পরিচালনা করা হয়; তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব। ইতোমধ্যে পরিবেশ অধিদফতরের মাধ্যমে সব ইটভাটাকে নোটিস দিয়েছি। তারা যেন অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়া ভাটার কার্যক্রম শুরু না করে। ফসলি জমির মাটির উপরিভাগ উত্তোলন করে ইট বানানোর বিষয়ে জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা বলেন, এটি যদি নিয়মের ভিতরে থেকে না করে, তাহলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

 

সর্বশেষ খবর