লালমনিরহাটে তামাক চাষ বাড়ছে। এর আবাদ যেমন ফসলি জমির মাটির গুণাগুণ নষ্ট করে, তেমনি এর সংস্পর্শে থাকা কৃষকের স্বাস্থ্যের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। এরপরও এই ফসল চাষ করছেন বিপুল সংখ্যক পরিবার। অধিকাংশ কৃষক স্ত্রী-সন্তান-ভাই-ভাতিজা নিয়ে তামাক খেত পরিচর্যা করছেন। লালমনিরহাটের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের মুসর দৌলজোর গ্রামের কৃষক নূর ইসলামের দুই বিঘা জমি। পুরো জমিতেই তিনি তামাক চাষ করেছেন। রোপা আমন কেটে এক মাস হলো রোপণ করেছেন তামাকের চারা। সেই খেতে পানি দিচ্ছেন তার মা রাবেয়া (৬২), ভাতিজা আলাউদ্দিন (১৪)। এমনকি তার আট বছরের মেয়ে তামান্নাও ব্যস্ত সেই কাজে। নূর ইসলাম জানান, তামাক কোম্পানির প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া সার, বীজ ও কীটনাশকের কারণে এর আবাদ তার জন্য সহজ হয়েছে। তামাক পাতা শুকানোর পর বিক্রির জন্য বেগও পেতে হয় না। যে কোম্পানি তাকে প্রণোদনা দিয়েছে সেই কোম্পানিই তার থেকে তামাক নির্ধারিত দামে কিনে নেয়। স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে জেনেও কেন তা আবাদ করেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে নূর ইসলাম বলেন, অন্য ফসলে যে লাভ, তামাক বিক্রি করে তার চেয়ে বেশি পাওয়া যায়। নূর ইসলামের তামাক খেতের পাশেই কৃষক জয়নালের ফসলি জমি। তিনি ৪৫ শতাংশ জমিতে চাষ করছেন তামাক। প্রশ্নের জবাবে জয়নাল বলেন, সমস্যা হয় যখন পূর্ণবয়স্ক পাতা শুকাতে দিই। সে সময়ে এর আশপাশে যাওয়া যায় না, গন্ধ বহুদূর থেকেও পাওয়া যায়। নূর ইসলাম, জয়নালের মতো অনেকে জানান, তামাক ক্রয়ে জেলায় অন্তত সাতটি কোম্পানি আছে। কোম্পানির এলাকাভিত্তিক নিজস্ব তামাক চাষির তালিকা আছে। তালিকা ধরে বিনামূল্যে বীজ, ঋণ হিসেবে বাজারদরে সার, কীটনাশক এবং নগদ টাকাও ঋণ দেয়। জেলার আদিতমারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিশেষঞ্জ ডা. আজমল হক বলেন, যেসব এলাকায় বেশি তামাক চাষ হচ্ছে সেখানকার শিশুরা শ্বাসকষ্ট, হাঁপানিসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গত ১০ বছরে এমন চিত্রই পরিলক্ষিত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সাবেক (অবসরপ্রাপ্ত) উপপরিচালক বিধুভূষণ রায় বলেন, তামাক পাতা উঠানোর মৌসুমে বাড়ির নারী, পুরুষ শিশুকে একসঙ্গে কাজ করতে হয়। এ সময় শিশুরা স্কুল কামাই করে অভিভাবকদের সঙ্গে মাঠে কাজ করে। তাদের শিক্ষাজীবনে ব্যাঘাত হচ্ছে। লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, তামাক চাষে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগ নানা উদ্যোগ নেয়। তামাক আবাদের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে সচেতন করার পাশাপাশি বিকল্প ফসল চাষে কৃষকদের নানা প্রণোদনা দেওয়া হয়। অধিক লাভের আশায় তামাকের বিকল্প ফসল চাষে কৃষকরা আগ্রহ কম দেখান।