মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

পচন ধরেছে আলু খেতে

ওষুধ ছিটিয়েও মিলছে না সমাধান

শেরপুর ও নালিতাবাড়ী প্রতিনিধি

পচন ধরেছে আলু খেতে

শেরপুরে তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশায় ক্ষতিগ্রস্ত আলুর খেত -বাংলাদেশ প্রতিদিন

অতিরিক্ত ঠান্ডা ও কুয়াশায় শেরপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার আলু খেতে পচন ধরেছে। প্রতিকারের জন্য ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক প্রয়োগ করেও তেমন ফল পাচ্ছে না কৃষক। এ রোগের কারণে আলু চাষিদের এখন মাথায় হাত। কৃষি বিভাগ বলছে, এর নাম লেট ব্লাইট রোগ। রোদ না থাকলে ও ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীত হলে আলু খেতে এ রোগ হয়। এটি এক ধরনের ছত্রাক। দেড় সপ্তাহ ধরে রোদহীন ঘন কুয়াশা ও শীতের কারণে এই রোগের বিস্তার হয়েছে। কৃষি বিভাগ বাজার থেকে ছত্রাকনাশক ক্রয় করে স্প্রে করার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। জানা গেছে, শেরপুর জেলার বিশেষত চরাঞ্চলে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে লাগানো হয়েছে আলু। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে শেরপুর জেলায় ৫ হাজার ২২২ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করা হয়েছে। আলু ধরার শেষ সময়ে এসে আবহাওয়ার এমন বৈরিতায় গাছ পচে মরে যাচ্ছে। কৃষকদের অভিযোগ বাজার থেকে ছত্রাকনাশক ও ওষুধ এনে স্প্রে করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। একে তো আলুর আশা ফিকে হচ্ছে তার ওপর আবার অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে।

কৃষি অফিসের তথ্যমতে, আলু সাধারণত নভেম্বর মাসে লাগানো হয়। লাগানোর ৮০ দিনের মধ্যে আলু তোলা যায়। টানা ঠান্ডা ও কুয়াশায় নালিতাবাড়ির ৭০ ভাগ কৃষকের জমির আলু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আলু খেত মরে গেছে। বিশেষ করে কাকরকান্দী, রামচন্দ্রকুড়া মন্ডলিয়াপাড়া, মরিচপুরান, বাঘবেড় ও যোগানীয়া ইউনিয়নের কৃষকদের বেশি ক্ষতি হয়েছে। দেশে প্রতিবছর এ রোগের কারণে আলু উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হয়। ঠান্ডা ও আর্দ্র আবহাওয়ায় এবং দীর্ঘ সময় শিশির থাকলে এ ক্ষত দ্রুত বড় হয়ে গাঢ় বাদামি বা কালো দাগে পরিণত হয়। কয়েক দিনের মধ্যে নতুন সংক্রমণ শুরু হয় এবং কয়েকটি দাগ একত্রিত হয়ে গোটা পাতা পুড়ে যায়। গোটা গাছ কালো হয়ে ঢলে পড়ে এবং ২-৩ দিনের মধ্যে খেতের সব গাছ মরে যেতে থাকে। গাছের ওপরের অংশ আক্রান্ত হওয়ায় মাটির নিচের আলুও আক্রান্ত হয়।

কাকরকান্দী ইউনিয়নের বিন্নিবাড়ীর মো. নজরুল ইসলাম (৫০) বলেন, ‘এবার আমি ৫০ শতাংশ জমিতে আলুর বীজ লাগিয়েছিলাম। আলু গাছও ভালো হয়েছিল কিন্তু হঠাৎ দেহি সব গাছ মইরা যাইতেছে। ওষুধ দেওয়া হলো এরপরও দুই দিনের মধ্যে সব আলুগাছ মইরা গেছে। লাভের আশায় লগ্নি করে এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার এনে আলু চাষ করছিলাম, কিন্তু আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেল।’

নালিতাবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন ও মওদুদ আহমেদ বলেন, আলুর এ রোগে চলতি বছর সারা দেশ কমবেশি আক্রান্ত হয়েছে। এই এলাকায় যে সব কৃষক দেশি জাতীয় আলু রোপণ করেছে সেসব খেত আক্রান্ত বেশি হয়েছে। আমাদের কাছে খবর আসা মাত্রই কৃষকদের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি। এরপরও এ রোগে আক্রান্ত আলু খেত একদম মরে গেছে। এতে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শেরপুরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) খামারবাড়ী মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম জানান, দিন এবং রাতের তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে আলু খেতে এ রোগ দেখা দিচ্ছে। ভালো ছত্রাকনাশক ওষুধ আছে, সেগুলোই আপাতত ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। বৈরী আবহাওয়া কেটে গেলে এ সমস্যা কেটে যাবে।

সর্বশেষ খবর