শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

পুষ্টি মডেল সবজি বাগানে ঝোঁক

চিরিরবন্দরে এক গ্রামেই ৭৮ বাগান

দিনাজপুর প্রতিনিধি

পুষ্টি মডেল সবজি বাগানে ঝোঁক

পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল সবজি বাগান গড়ে তোলায় ঝুঁকেছেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের মানুষ। তাদের বাগানে রয়েছে বেগুন, টমেটো, বাঁধাকপি, পুঁইশাক, মরিচ, লেবু, পেয়ারা, অ্যালোভেরা, শতমূলী সবজিসহ পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় ফসল। এ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ৬২৫টি পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।

জানা গেছে, জেলার চিরিরবন্দরের সাতনালা ইউনিয়নের ইছামতী গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে ৭৮টি পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান। ওই গ্রামে মডেল বাগানের মালিক মো. মিজানুর রহমানের স্ত্রী রিনি বেগম জানান, বাজারে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি। বাজারে শাকসবজির দাম চড়া হলেও আমাদের তা আঁচ করতে হচ্ছে না। আমরা আমাদের পুষ্টি নিরাপত্তায় মডেল বাগান থেকেই তা সংগ্রহ করে রান্না করে খাচ্ছি। প্রয়োজন মেটানোর পর উদ্বৃত্ত থেকে আত্মীয়-স্বজনদের দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান দেশে এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। সেই নির্দেশনা মেনেই গ্রামবাসীকে এরকম বাগান গড়ে তুলতে উদ্বুদ্ধ করেছে কৃষি বিভাগ। এসব বাগানে কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয় না। মুরগির বিষ্ঠা, গৃহস্থালির আবর্জনা দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি করে জমিতে প্রয়োগ করা হচ্ছে। কীটনাশক হিসেবে জৈব ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার, ফেরোমেন ফাঁদ ও হলুদ ট্যাব ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব বাগানের ফসল সম্পূর্ণ নিরাপদ, জানায় কৃষি বিভাগ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের সহযোগিতায় প্রতিটি পরিবারে দেড় শতক জমিতে গড়ে উঠেছে সবজি বাগান। বাড়ির আঙিনায় যেখানে ছিল আবর্জনার স্তূপ, শুয়ে থাকত কুকুর-বিড়াল সেই উঠানে এখন সবুজ প্রকৃতি। কৃষক সোহেল রানার স্ত্রী মিনা বেগম তার উঠানের দেড় শতক জমিতে মরিচ, বেগুন, টমেটো, বাঁধাকপি, পুঁইশাক, লেবু, পেয়ারা, অ্যালোভেরা, শতমূলী ইত্যাদি আবাদ করছেন। তিনি বলেন, নিজের জমিতে চাষ করে ভালো ফল পেয়েছি, ভালো লাগছে। যে জমি আগে পতিত পড়েছিল, তা থেকে এখন অনেক ফলন পাচ্ছি। ওই গ্রামের মো. ফয়েজ উদ্দিনের স্ত্রী নুরজাহান বেগম বলেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিএস) রত্নাকর রায়ের পরামর্শে গড়ে তুলেছি সবজি বাগান। কোদাল দিয়ে মাটি কুপিয়ে বীজ বপন উপযোগী করেছি। সেখানে ৫টি বেড তৈরি করেছি। প্রতিটি বেড ১ মিটার চওড়া ও মাঝে ২৫ সেমি নালা। যাতে সহজে পানি সেচ দেওয়া যায়। গত বছর অক্টোবর মাসে বাগানগুলো গড়ে তুলেছি। এর মধ্যে ২-৩ বার ফলন পেয়েছি। মতিউর রহমানের স্ত্রী নাছিমা বেগম জানান, তার বাগানে এখন সবুজ শাক, পুঁইশাক, ধনেপাতা, ঘিমা শাক, থাইল্যান্ডের আখ, পালংশাক, করলা, কাটিমন আম, তুলসী ও মরিচ রয়েছে। বস্তায় আদা চাষ করা হয়েছে। এখন আমরা কোনো সবজি তেমন বাজার থেকে কিনে খাই না। বাগান থেকে যা পাই তা অনেক। এ গ্রামে শুধু সবজিই নয় পাশাপাশি ওইসব বাগানে ফল, ভেষজ ও মসলাও চাষ হচ্ছে। চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, আমরা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ৬২৫টি পারিবারিক পুষ্টি বাগান গড়ে তুলেছি। বসতবাড়ির আশপাশে অনাবাদি ও পতিত জমিতে এসব বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। এতে অনাবাদি জমির ব্যবহার হচ্ছে এবং কৃষকরা নিজেদের উৎপাদিত শাকসবজি দিয়ে চাহিদা পূরণ করতে পারছেন। উৎপাদন করা শাকসবজির কিছু বিক্রি করে বাড়তি আয় করতে পারছেন। কৃষকরা নিরাপদ ও বিষমুক্ত শাকসবজি খেতে পারছেন।

সর্বশেষ খবর