বুধবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

নষ্ট কোটি কোটি টাকার সম্পদ

বোনারপাড়া-তিস্তামুখঘাট ও ত্রিমোহনী-বালাসীঘাট রেলপথ দুই যুগ বন্ধ

সাইফুল মিলন, গাইবান্ধা

নষ্ট কোটি কোটি টাকার সম্পদ

গাইবান্ধায় পরিত্যক্ত রেললাইনে চরানো হয় গবাদিপশু -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রায় দুই যুগ ধরে বন্ধ হয়ে থাকা গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া-তিস্তামুখঘাট, সদর ও ফুলছড়ি উপজেলার ত্রিমোহনী-বালাসীঘাট রেলরুটে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে রেলের কোটি কোটি টাকার সম্পদ। পরিত্যক্ত এ দুই রেলপথের বিভিন্ন মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে যাচ্ছে। খুলে নেওয়া হয়েছে রেললাইনের স্লিপার, ফিসপ্লেট, নাট বোল্ট। গায়েব হয়ে যাচ্ছে রেলপথের ইস্পাতও। অনেক স্থানে রেলপথ দখল করে ঘর, দোকানও তৈরি করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৩৮ সালে ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ স্থাপনে ব্রিটিশ সরকার বর্তমান গাইবান্ধার ফুলছড়ির তিস্তামুখঘাট থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাটে ব্রহ্মপুত্র নদে রেলফেরি সার্ভিস চালু করে। সাঘাটার বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশন থেকে ফুলছড়ির তিস্তামুখঘাট পর্যন্ত রেললাইন স্থাপন করা হয়। ১৯৯৭ সালে ফেরি সার্ভিস গাইবান্ধা অংশের ফুলছড়ির তিস্তামুখঘাট থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে বালাসীঘাটে স্থানান্তর করা হয়। এ সময় প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ত্রিমোহিনী স্টেশন থেকে বালাসীঘাট পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হয়। তবে এর পরই ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয় বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু। এরপর থেকে বালাসীঘাটের গুরুত্বও কমতে শুরু করে। ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্য হ্রাসের কারণে ২০১৬ সাল থেকে বালাসীঘাট-বাহাদুরাবাদ রুটে রেলওয়ের ফেরিসার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে তিস্তামুখ ফেরিঘাটও বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে এখানের প্রায় ২৪ কিলোমিটার রেলপথ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, এ রেলপথের অসংখ্য স্থানে কাঠের স্লিপার পচে নষ্ট হয়ে গেছে। রেললাইনের নিচের মাটি ক্ষয়ে সরে গেছে। বেশকিছু স্থানে মরিচা পড়েছে রেললাইনে। অনেক স্থানে কেটে নেওয়া হয়েছে রেলপথের ইস্পাত। কাঠের স্লিপার পচে নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের নিচে মাটি ছাড়া আর কিছুই নেই। কোথাও কোথাও মাটিও নেই, ঝুলে আছে রেললাইন। চুরি হয়ে গেছে ফিসপ্লেট, নাট-বোল্ট ও স্লিপার। বেশির ভাগ রেললাইন মাটি চাপা পড়েছে। অনেক জায়গায় জঙ্গলে ঢেকে গেছে লাইন। বালাসীঘাট সংলগ্ন এলাকায় লাইনের ওপর ঘরবাড়ি করেছে প্রায় ২০০ পরিবার। বালাসীঘাট এলাকার রাসেল মাস্টার বলেন, এখানে রেলপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন দ্বিগুণ ভাড়া গুণতে হয়, ঢাকা যেতে হয় দীর্ঘপথ অতিক্রম করে।

ত্রিমোহনীর সমাজসেবক আতোয়ার রহমান বলেন, রেলস্টেশন, ত্রিমোহিনী-বালাসী রেলপথে কর্তৃপক্ষের নজরদারি নেই। পাহারাদার থাকলেও স্লিপার, নাট-বোল্ট নেই। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে রেলপথ মন্ত্রণালয় ত্রিমোহনী-বালাসীঘাট রেললাইন ভেঙে মালামাল নিরাপদ স্থানে সরানোর আদেশ দেয়। সেই সঙ্গে বালাসীঘাটের মেরিন বিভাগের সব ফেরি ও ইঞ্জিন নিলামে বিক্রির নির্দেশ দেওয়া হয়। মেরিন বিভাগ ইতোমধ্যে ফেরি ও ইঞ্জিন নিলামে বিক্রি করেছে। কিন্তু প্রকৌশল বিভাগ ত্রিমোহনী-বালাসীঘাট লাইনের মালামাল তুলে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে না।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের এই রেলপথ দুটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মাজেদুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, বোনারপাড়া-তিস্তামুখঘাট রেলপথ দেখভালে একজন নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত রয়েছেন। তারপরও কীভাবে চুরি যাচ্ছে খতিয়ে দেখা হবে। ত্রিমোহনী-বালাসীঘাট রেলপথ উঠিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিম অঞ্চল রাজশাহীতে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলে রেলপথটি সরিয়ে নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর