দেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম জনপদে মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন সাতক্ষীরার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ। ১২৭০ বঙ্গাব্দে নির্মিত মসজিদটি সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও পলেস্তরা খসে পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, তালায় কয়েকটি দর্শনীয় স্থান আছে। তার মধ্যে অন্যতম এ তেঁতুলিয়া শাহী জামে মসজিদ। প্রায় ২০০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক এ স্থাপনা স্থানীয়রা মিয়ার মসজিদ নামেও চেনে। যদিও এর মূল নাম খান বাহাদুর কাজী সালামতউল্লাহ জামে মসজিদ। এর অপূর্ব নির্মাণশৈলী সহজেই সবাইকে আকৃষ্ট করে। ‘মোগল মুমেন্টস অব বাংলাদেশ’ নামক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, মৌলভী কাজী সালামতউল্লাহ খান বাহাদুর তেঁতুলিয়ার জমিদার ছিলেন। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ব্রিটিশ শাসনামলের ডেপুটি কালেকটর এবং ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। জনশ্রুতি রয়েছে, তিনি ১২৭০ বঙ্গাব্দে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। তালা উপজেলা থেকে উত্তরে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে খুলনা-পাইকগাছা সড়কের কোল ঘেঁষে রাস্তার পাশেই এক একর জায়গাজুড়ে এ মসজিদ। মসজিদটিতে রয়েছে সাতটি দরজা। প্রতিটি দরজার উচ্চতা ৯ ফুট এবং প্রস্থ ৪ ফুট। ১০ বর্গফুট বেড়বিশিষ্ট ১২টি পিলারের ওপর মসজিদের ছাদ নির্মিত। চুন-সুরকি ও চিটাগুড়ের গাঁথুনিতে নির্মিত মসজিদটিতে ১৫ ফুট উচ্চতার ছয়টি বড় গম্বুজ এবং আট ফুট উচ্চতার ১৪টি মিনার রয়েছে। এ ছাড়া ২৫ ফুট উচ্চতার চার কোণে চারটি মিনার রয়েছে। এর সঙ্গেই রয়েছে বিশাল একটি পুকুর। এর ভিতরে পাঁচটি সারিতে ৩২৫ জন ও মসজিদের বাইরের চত্বরে ১৭৫ জন একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। ১৯৮৭ সালে মসজিদটি প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদফতর আয়ত্তে নিয়েছে। মসজিদের সামনে একটি প্লেটে লন্ডনপ্রবাসী মন্টি সিদ্দিকী (কাজী সালামতউল্লাহর বংশধর) নামে এক ব্যক্তির দেওয়া তথ্যমতে, এ মসজিদের সঙ্গে ১৮৪০-৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতার শাহজানী বেগম মসজিদ এবং ১৮৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতার ধর্মতলার টিপু সুলতান মসজিদের সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামটি নানা কারণে খ্যাত। মসজিদের খুব কাছে সালাম মঞ্জিল। এটিই জমিদার সালামউল্লাহ খানের বসতবাড়ি। যার ধ্বংসাবিশেষ এখনো আছে। এর দক্ষিণ পাশেই বিখ্যাত হাসেমী বাড়ি। সাহিত্যিক সিকিন্দার আবু জাফরের জন্মস্থান।