শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

মাটি কেটে কৃষিজমি ধ্বংসের মহোৎসব

কমছে উৎপাদনক্ষমতা হারাচ্ছে উর্বরতা

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

মাটি কেটে কৃষিজমি ধ্বংসের মহোৎসব

শ্রীমঙ্গলের নোয়াগাঁও গ্রামে এস্কেভেটর দিয়ে কৃষিজমির মাটি কাটা হচ্ছে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। এতে ধ্বংস হচ্ছে কৃষিজমি। উপজেলা সদরের আশিদ্রোণ, সিন্দুরখান, মির্জাপুর, ভুনবীর ও কালাপুর ইউনিয়নে আইন অমান্য করে প্রতিদিনই কৃষিজমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে। উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় উর্বরতা হারাচ্ছে জমি। কমছে জমির উৎপাদনক্ষমতা।

জানা যায়, প্রতি বছর শুকনো মৌসুমে মাটি ব্যবসায়ীরা মাটি বেচাকেনার জন্য ওত পেতে থাকেন। জমির মালিকদের নগদ টাকার লোভ দেখিয়ে মাটি কেটে নেন। এসব মাটি ইটভাটা বা বাসাবাড়ির ভিটায় ব্যবহার করা হচ্ছে।

সরেজমিনে উপজেলার নোয়াগাঁও, উত্তরসুর, উত্তর উত্তরসুর, পশ্চিম ভাড়াউড়া, সবুজবাগ ভৈবরতলী, আমনাতপুর, ভাগলপুর, জানাউড়া, কড়ইতলা, খলিলপুর, টিককিয়া, শংকরসেনা ও আশিদ্রোণ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ফসলের জমি থেকে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে মাটি কেটে তোলা হচ্ছে গাড়িতে। কোনো কোনো জমি থেকে মাটি কাটা হচ্ছে এক্সকেভেটর দিয়ে। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি এক এক করে মাটি ভর্তি করে চলে যাচ্ছে। এসব মাটির গাড়ি চলাচলে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। কোনো জমির উপরিভাগের ৬ ইঞ্চি, কোনোটিতে ৮, আবার কোনো জমির ১০ ইঞ্চি করে মাটি কাটা হচ্ছে। এতে বর্ষা মৌসুমে পাশের উঁচু জমির আইল ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। নিচু জমিতে পানি নেমে শুকিয়ে যাবে উঁচু জমি।

জানা যায়, সড়কের পাশের ১ কেয়ার জমির মাটি ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। একটু নিচু এলাকার মাটি ৫-৬ হাজার টাকা কেয়ার। আবার কোথাও ১০০-২০০ টাকা গাড়ি হিসেবে মাটি বিক্রি হচ্ছে।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার নোয়াগাঁওয়ের পল্লাদ দেব বলেন, ‘উচু জমিতে ধান হয় না। তাই মাটি কেটে জমি নিচু করছি। প্রতি গাড়ি মাটিতে ১৫০ টাকা করে পাচ্ছি।’

বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মদন গোপাল সাহা বলেন, ‘জমির উৎপাদন শক্তি জমা থাকে মাটির ৬ থেকে ১৮ ইঞ্চি গভীরতায়। এটাই টপসয়েল বা প্রাণমাটি। এলাকাভেদে জৈবিক প্রক্রিয়ায় টপসয়েল তৈরিতে ১০০ থেকে ৫০০ বছর লাগে। মাটির এ অংশেই ফসল বেড়ে ওঠার গুণ সুরক্ষিত থাকে। টপসয়েল থেকেই বীজ প্রয়োজনীয় জীবনীশক্তি গ্রহণ করে। এ অংশ একবার কেটে নিলে জমিতে মৃত্তিকাপ্রাণ থাকে না। জমি পঙ্গু হয়ে যায়। জমির উৎপাদনক্ষমতা কমে যায়।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘ফসলি জমির উপরিভাগের টপসয়েল কেটে নিলে ওই জমিতে ৬০ শতাংশ ফসল কম উৎপাদন হবে। সার বা গোবর দিয়েও জমি ভালো করা যাবে না। এটা বন্ধ করার দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনের। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছে।’ শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, ‘আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু ঘটনাস্থলে গিয়ে কাউকে খুঁজে পাই না। আমাদের যাওয়ার খবর পেলেই তারা পালিয়ে যায়।’

সর্বশেষ খবর