মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

অবৈধ বালু তোলায় পদ্মায় ভাঙন

হারিয়ে যাচ্ছে কৃষিজমি, নিঃস্ব হচ্ছে অনেকে

জাহিদুজ্জামান, কুষ্টিয়া

অবৈধ বালু তোলায় পদ্মায় ভাঙন

পদ্মা নদী থেকে ড্রেজার মেশিনে তোলা হচ্ছে বালু

হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ফের পদ্মা নদী থেকে বালু তুলছে প্রভাবশালী একটি চক্র। অপরিকল্পিত বালু তোলায় ভেঙে যাচ্ছে নদীপারের ফসলি জমি। বদলে যাচ্ছে নদীর স্বাভাবিক প্রকৃতি। পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পদ্মা নদী প্রচুর সেডিমেন্ট ক্যারি করে। সেগুলো তুলে ফেলা দরকার হয়। তবে এভাবে বালু উত্তোলন করতে গিয়ে এক জায়গায় বেশি গর্ত করা হচ্ছে। এ কারণেই পানির চাপে দেখা দিচ্ছে নদী ভাঙন।’

নদী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আনোয়ারুল করীম বলেন, ‘গঙ্গা থেকে পানি কম পাওয়ায় পদ্মা, গড়াই শুকিয়ে যাচ্ছে। এজন্য গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প অকার্যকর হয়ে যাচ্ছে। নদীর স্বার্থে ড্রেজিং দরকার। কিন্তু এভাবে বালু চুরি করে তোলায় কোনো উপকার হচ্ছে না। উল্টো নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ নষ্ট হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চের আদেশ অনুযায়ী রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ থেকে পাবনার পাকশী পর্যন্ত পদ্মায় বালু তোলা নিষিদ্ধ। প্রভাবশালীরা নির্দেশনা অমান্য করে প্রথম থেকেই অবৈধভাবে বালু তুলছেন। গত বছরের ২০ অক্টোবর অবৈধভাবে বালু তোলার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন ছয় সাংবাদিক। সে ঘটনায় সাংবাদিকদের করা মামলা চলমান। এরপর বন্ধ হয় বালু তোলা। চার মাস বিরতি দিয়ে চলতি ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে আবার বালু তুলছে ওই চক্র। প্রতিদিন অসংখ্য নৌকায় বসানো ড্রেজারে বালু তোলা হচ্ছে কুষ্টিয়ার হাটশ হরিপুর সংলগ্ন পদ্মা থেকে। এ পয়েন্টে একপাশে কুষ্টিয়ার সীমানা, অন্য প্রান্তে পাবনা। পাবনা প্রান্তে নদী ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে শত শত বিঘা কৃষিজমি। হাটশ হরিপুর ইউপি মেম্বার আতাহার মন্ডল বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের ফসলসহ খেত ভেঙে যাচ্ছে।’ ভবানীপুরের বাবু মেম্বার বলেন, ‘কলাগাছ, ধান, সবজি ও খেসারি খেত ভেঙে গেছে।’ কৃষক খাদিম বলেন, ‘জমি-ফসল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেলাম।’ পাবনা নৌপুলিশ সুপার রুহুল কবির বলেন, ‘একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বাস ট্রেডার্স, টনি, খান এন্টারপ্রাইজসহ পাঁচটি কোম্পানিকে ১২টি পয়েন্টে বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’ তবে সে রিটের তথ্য, এমনকি রিট নম্বরও দিতে পারেননি তিনি। জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা বলেন, ‘বালু তোলা শতভাগ অবৈধ। একটি লিভ টু আপিলের কাগজ দেখিয়েছেন বালু উত্তোলনকারীরা। যে কোর্ট বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন, সে কোর্টই এটি ডিসপোজাল করবেন। তার মানে এই নয় যে, বালু তুলতে বলছেন। এ ছাড়া বিআইডব্লিউটিএ’র একটি আইনগত মতামত এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বালু তোলার ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু হাই কোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাণিজ্যিকভাবে বালু তোলার কোনো সুযোগ নেই।’ ভেড়ামারার ইউএনও আকাশ কুমার কুন্ডু বলেন, ‘গত কয়েকদিনে আমরা দুজনকে কারাদন্ড দিয়েছি। অভিযান চলমান আছে।’

সর্বশেষ খবর