বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

পিঁয়াজ চুরি ঠেকাতে খেত পাহারা

পাবনায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ

পাবনা প্রতিনিধি

পিঁয়াজ চুরি ঠেকাতে খেত পাহারা

উচ্চমূল্যের কারণে পিঁয়াজের ভান্ডার খ্যাত পাবনায় খেতে চোরের উৎপাত খুব বেড়েছে। চুরি ঠেকাতে পাবনার কৃষকরা এখন রাত জেগে পিঁয়াজ খেত পাহারা দিতে ব্যস্ত। খেতের পাশে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বানানো হয়েছে তাঁবু। দূরে দূরে তাঁবু খাটিয়ে ৩-৪ জন করে রাত জেগে লাঠিসোঁটা নিয়ে পিঁয়াজ পাহারা দিচ্ছেন। এক সপ্তাহ ধরে প্রতি মণ পিঁয়াজ ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভরা মৌসুমে এমন দাম নজিরবিহীন। কোনো কোনো চাষি পরিণত হওয়ার আগেই খেত থেকে পিঁয়াজ তুলে বিক্রি করছেন। প্রতি কেজি পিঁয়াজ পাইকারি ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাবনার হাটবাজারগুলোতে।

পাবনা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর ৭ লাখ ৭৮ হাজার ৮১৮ মেট্রিক টন পিঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬১ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হালি পিঁয়াজের জন্য ৫৩ হাজার ২৭৫ হেক্টরে ৭ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন এবং কন্দ বা মূলকাটা পিঁয়াজের জন্য ৮ হাজার ৬২০ হেক্টরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ছিল ১৮ হাজার ৮১৮ টন। গত মৌসুমের চেয়ে চলতি বছর ১২০ হেক্টর জমিতে কন্দ বা মূলকাটা পিঁয়াজ বেশি আবাদ হয়। মূলকাটা পিঁয়াজের দাম বেশি পাওয়ায় হালির আবাদের লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়েছে, জানান কৃষি কর্মকর্তারা। হালি পিঁয়াজ গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে ৮ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকরা জানান, ১১ ফেব্রুয়ারি বেড়া উপজেলার জোরদহ গ্রামের ইসহাক আলী ও খাকছাড়া গ্রামের আইয়ুব আলীর খেত থেকে পিঁয়াজ চুরি হয়েছে। সাঁথিয়ার পুন্ডুরিয়া গ্রামের হাবুল মানিক মন্টুর এবং ইমদাদুল হকসহ ওই এলাকার প্রায় ১০ কৃষকের পিঁয়াজ খেত থেকে চুরি হয়েছে। এ খবর কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে রাতে গ্রামে গ্রামে পিঁয়াজ পাহারার জন্য খেতের পাশে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে বানানো হয়েছে তাঁবু। খানিকটা দূরে দূরে এ রকম ঘর তুলে ৩-৪ জন করে জেগে পিঁয়াজ পাহারা দিচ্ছেন। কৃষকরা বলছেন, প্রতিটি জমিতেই পিঁয়াজ বেশ বড় হয়েছে। এ পিঁয়াজ চোরদের তুলতে সময় লাগে না। একজন আধাঘণ্টা সময় তুললে এক থেকে দেড় মণ পিঁয়াজ তুলতে পারে। সুযোগ মতো ২-৩ জন চোর এসে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই ২-৩ মণ পিঁয়াজ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা পাহারা দিচ্ছি। সুজানগরের কাদোয়া গ্রামের কৃষক শফিকুল মোল্লা বলেন, ‘আমি চার বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পিঁয়াজ লাগিয়েছি, দুই বিঘা বিক্রি করেছি। অনেক গ্রামেই পিঁয়াজ চুরি হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। চুরি হওয়ার ভয়ে সবাই মিলে রাতে পিঁয়াজ পাহারা দিচ্ছি। দাম বেশি তাই কাঁচা পিঁয়াজ তুলে বিক্রি করে দিচ্ছি। এ পিঁয়াজ পুরোপুরি পরিণত হতে আরও অন্তত ১৫ দিন সময় লাগবে।’ পাবনার আটঘরিয়া ও চাটমোহর উপজেলার বেশকিছু গ্রামে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চোরের ভয়ে পিঁয়াজের খেতের পাশে বসানো হয়েছে অস্থায়ী ছাউনি। রাতে কৃষকরা কয়েকজন মিলে সেখানে বসে খেত পাহারা দেন। এ ছাড়া যেখানে পাহারা দেওয়া সম্ভব নয় সেখানে পরিণত (পুষ্ট) হওয়ার আগেই কৃষকরা জমি থেকে পিঁয়াজ তুলে নিচ্ছেন। পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দীন বলেন, ভরা মৌসুমেও কৃষকরা ভালো দামে পিঁয়াজ বিক্রি করছেন। দামের কারণেই কোনো কোনো জায়গায় খেত থেকে পিঁয়াজ চুরির ঘটনা ঘটছে। তবে বিষয়টি সম্পর্কে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও থানায় অবহিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর