মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বাউকুল চাষে আগ্রহ বেড়েছে

এক গ্রামেই স্বাবলম্বী প্রায় ৮০০ পরিবার

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

বাউকুল চাষে আগ্রহ বেড়েছে

ঝিনাইদহের মহেশপুরে বাউকুল (বরই) চাষে আগ্রহ বেড়েছে শত শত কৃষকের। অনেকেই বাণিজ্যিকভিত্তিতে এ ফল চাষ করছেন। এ উপজেলার শুধু ভাটপাড়া গ্রামেই কুল চাষ করেন প্রায় ৮০০ পরিবার। সরেজমিন মহেশপুরের ভাটপাড়ায় গিয়ে চোখে পড়ে মাঠের পর মাঠ বাউকুল বাগান। স্থানীয়রা জানান, সেখানে কেউ নিজের জমি আবার কেউ অন্যের জমি লিজ বা বর্গা নিয়ে চাষ করেছেন এ ফল। সেখান থেকে প্রতিদিন ট্রাকে কুল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এই গ্রামে ৯০০ পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে প্রায় ৮০০ পরিবারই বাউকুল চাষে জড়িত। গ্রামের প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমির মধ্যে ২ হাজার ৪০০ বিঘা জমিতে চাষ করা হয়েছে এই ফল। কৃষি অফিসের সূত্র মতে, বাউকুল চাষে দেশের সবচেয়ে বড় গ্রাম এটি। স্থানীয়রা ভাটপাড়াকে কুলের গ্রাম নামেই চেনে। কৃষকেরা জানান, ২০১১ সালের দিকে এই গ্রামের কৃষক তাজু উদ্দিন মহেশপুর উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় প্রথমে দেড় বিঘা জমিতে বাউকুল চাষ করেন। সেই বছরই তিনি কুল বিক্রি করে অনেক টাকা আয় করেন। এরপর কুল চাষে আগ্রহ বেড়ে যায় তার। পরের বছর আরও চার বিঘা জমিতে বাউকুল চাষ করেন তিনি। এরপর তাজু উদ্দিনকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার দেখাদেখি অন্যরাও শুরু করে বাউকুল চাষ। এ ফল চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন শত শত চাষি। কেউ তৈরি করেছেন পাকা বাড়ি, কেউ কিনেছেন জমি, মোটরসাইকেল। গ্রামের এনামুল হকের ছয় বিঘা, তাজু উদ্দিনের আট বিঘা, সোহরাব উদ্দিনের ১৫ বিঘা, সবুজ উদ্দিনের আট বিঘা, ফারুক হোসেনের তিন বিঘা, শিপনের ছয় বিঘা, মেহেদীর পাঁচ বিঘা, ফারুকের সাত বিঘা, এপিয়ারের ছয় বিঘাসহ এই গ্রামের প্রায় ৮০০ পরিবার কুলচাষে জড়িত। এসব বাগানে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার নারী-পুরুষ কাজ করছেন।

কুলচাষি ডা. তাজু উদ্দিন জানান, কুলচাষ খুবই লাভজনক। এক বিঘা জমিতে কুল থাকলে সব খরচ বাদে ১ থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। তার আট বিঘা জমিতে কুল আছে। তার দেখাদেখি প্রায় ২ হাজার ৪০০ বিঘা জমিতে বাউকুল ও বলসুন্দরী চাষ হচ্ছে। তিনি বলেন, বাউকুল মূলত তিন-চার মাসের ফসল। যে জমিতে কুল চাষ করা হয় সেই জমিতে বোরো ধান কিংবা কলাই চাষ করা যায়। চাষি লিটন মিয়া জানান, প্রতি কেজি বাউকুল পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। বলসুন্দরী ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে। ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাগান থেকেই কুল ট্রাকে ভরে নিয়ে যানে। এক বিঘা জমি থেকে ৯০ থেকে ১০০ কার্টুন কুল সংগ্রহ করা যায়। মহেশপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আসাদুজ্জামান জানান, বাউকুল একটি লাভজনক ফসল। অল্প সময়ে এটি চাষ করে বেশি লাভ পাওয়া যায়। মহেশপুরের মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রাম সম্ভাবত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাউকুল চাষ এলাকা। এই গ্রামের বাউকুলচাষিদের কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। কারিগরি, রোগবালাই, কৃষক প্রশিক্ষণ, কুল প্যাকেজিংসহ সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। বাউকুলচাষিদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য একজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মান্দারবাড়িয়া ব্লকে রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর