শিরোনাম
রবিবার, ১০ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

কৃষিজমি বসতবাড়ির পাশে ইটভাটা

♦ হুমকিতে জনস্বাস্থ্য ♦ উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল ♦ ভাটার যানবাহন চলাচলে নষ্ট হচ্ছে রাস্তাঘাট

জাকারিয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ

কৃষিজমি বসতবাড়ির পাশে ইটভাটা

হবিগঞ্জে ফসলি জমিতে গড়ে ওঠা ইটভাটা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

হবিগঞ্জের প্রতিটি উপজেলায় যত্রতত্রে গড়ে উঠছে ইটভাটা। বেশিরভাগ ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে ফসলি জমি ও বসতবাড়ির পাশে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এসব ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে বনের কাঠ। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি দিন দিন হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য, জীববৈচিত্র্য। অভিযোগ রয়েছে, অনেক ভাটার বৈধ লাইসেন্স কিংবা পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নেই। পরিবেশবাদীরা বলছেন, প্রশাসনের নজরদারির অভাবেই এমনটা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলায় ১২০টির অধিক ইটভাটা রয়েছে। বেশিরভাগ ভাটা গড়ে উঠেছে বনাঞ্চলঘেরা উপজেলা চুনারুঘাট, মাধবপুর ও বাহুবলে। সীমান্তবর্তী এসব উপজেলায় রয়েছে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, রেমা কালেঙ্গার মতো বিশাল বনাঞ্চল। রয়েছে বহু পাহাড় টিলা আর চা বাগান। এসব বনাঞ্চল থেকে রাতে গাছ কেটে নিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ভাটায়। বনের কাঠ পোড়ানোর ফলে ভাটাগুলো থেকে প্রতিনিয়ত নির্গত হচ্ছে কালো ধোঁয়া। ফসলি জমি বা বসতবাড়ির পাশে ভাটা হওয়ায় পরিবেশের পাশাপাশি প্রভাব ফেলছে সাধারণ মানুষের ওপর। ফসলি জমি ঘেঁষা ভাটা হওয়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ধানসহ শাকসবজি উৎপাদনে।

বাহুবল উপজেলার মিরপুর-ধুলিয়াখাল সড়ক, মিরপুর-বাহুবল সড়ক, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শায়েস্তাগঞ্জ থেকে মিরপুর অংশ, মিরপুর-শায়েস্তাগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক, চুনারুঘাট সাটিয়াজুরী ইউনিয়নের সুন্দরপুর সড়ক, শায়েস্তাগঞ্জ-চুনারুঘাট সড়কের দুই পাশে রয়েছে অর্ধশতাধিক ভাটা। এসব ভাটায় ইট বানানোর জন্য যাচ্ছে ফসলি জমির মাটি। যা পরিবহন করা হচ্ছে ট্রাক্টরে।        ফলে ভেঙে যাচ্ছে এলাকার রাস্তাঘাট। এর সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। এলাকাবাসী বিষয়টি নিয়ে বার বার প্রতিবাদ জানালেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত বছর অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বেশকিছু অভিযান পরিচালনা করা হলেও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা নেই। পরিবেশ অধিদফতরের কাছে সঠিক কোনো তথ্যও নেই। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি নিয়মনীতি মেনে ভাটা পরিচালনা হলে এত সমস্যা দেখা দিত না।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ফসলি জমি বা বসতবাড়ির পাশে ইটভাটা গড়ে ওঠা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। যার প্রভাব পড়ে পরিবেশের ওপর। তিনি বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রশাসনকে আরও কঠোর হয়ে নজরদারি বাড়াতে হবে। 

এ বিষয়ে চুনারুঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহিদুল ইসলাম বলেন, আবাদি জমির মাঝখানে ইটভাটা নির্মাণ বেআইনি। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ফসলের ওপর। চুনারুঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলীমা রায়হানা বলেন, বিষয়টি আমরা দেখছি। দ্রুত অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।

সর্বশেষ খবর