বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগের দুই পক্ষে গোলাগুলি লুটপাট

নরসিংদী প্রতিনিধি

আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নরসিংদী সদর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল আলোকবালী আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত নয়জন গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত হয়েছে। ১৫-২০টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও তিনটি গরু লুট হয়েছে। গতকাল ভোররাত ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত তিনজনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। তবে হামলা ও ভাঙচুর নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদ উল্লাহ ও ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপু।

গুলিবিদ্ধ ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপুর সমর্থকরা হলেন মো. মনিরুজ্জামান, বজলু মিয়া, শীতল মিয়া, আল-মাফুজ, আবদুর রহমান ও খোকা মিয়া। অন্যদিকে গুলিবিদ্ধ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদ উল্লাহর সমর্থকরা হলেন বাচ্চু মোল্লার ছেলে রমজান (২৫), আজিজ মোল্লার ছেলে মোজাম্মেল (১৮) ও মুকবুল মোল্লার ছেলে আরিফুল (১৯)। তাদের ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আমজাদ (২০) নামে একজন নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

জানা যায়, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আলোকবালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন দীপুর সঙ্গে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদ উল্লাহর দ্বন্দ্ব চলছে। এর জেরে কয়েকবার হামলা, মামলা, সংঘর্ষ ও একাধিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। সম্প্রতি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অ্যাডভোকেট আসাদ উল্লাহ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়। নির্বাচন কেন্দ্র করে আসাদ উল্লাহর বেশ কয়েকজন সমর্থক এলাকাছাড়া হয়েছেন। গতকাল ভোররাত ৫টার দিকে পাশের গ্রামের অর্ধশতাধিক লোক সঙ্গে নিয়ে দেশি অস্ত্রশস্ত্রসহ তারা গ্রামে ফিরে আসার চেষ্টা করেন। এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করতে গুলি বর্ষণ করতে থাকেন। ওই সময় দেলোয়ার হোসেন দীপুর সমর্থকরা বাধা দেন। এতে দুই পক্ষে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। এতে উভয় পক্ষের নয়জন ছররা গুলি বিদ্ধসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। ফেরার পথে হামলাকারীরা ফরহাদ নামে এক গ্রামবাসীর তিনটি গরু লুট করে নিয়ে যায়। পরে আহতদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। খবর পেয়ে সকালে সদর মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদ উল্লাহ বলেন, ‘ভোররাত ৫টার দিকে চেয়ারম্যান সমর্থকরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমার বাড়িসহ সমর্থকদের ওপর হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। ওই সময় তারা আমাদের ১৫-২০টি বাড়ি ভাঙচুর করে।’ অভিযোগ অস্বীকার করে আলোকবালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দীপু বলেন, ‘নির্বাচন ও গ্রামের মানুষের ওপর হামলার মামলায় আসাদের বেশ কিছু লোক গ্রামছাড়া। তারা আজ ভোরে ভাড়াটে সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের নিয়ে গ্রামে ফিরে নির্বিচারে আমার সমর্থকদের ওপর গুলি চালিয়েছে। তাদের হামলায় আমাদের ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।’ নরসিংদী সদর হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা ডা. মাহামুদুল বাশার কমল জানান, আলোকবালীর ঘটনায় ছিটা গুলিবিদ্ধ ছয়জন হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে তিনজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) কে এম শহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। গুলিবিদ্ধ হওয়ার কোনো খবর পাইনি। এখন এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

সর্বশেষ খবর