শিরোনাম
রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

শাখা বরাক নদী এখন মরা খাল

‘এর এমন কোনো স্থান নেই, যে অংশটুকু ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়নি। আর যেখানে ময়লা নেই, সে স্থানটুকু চলে গেছে প্রভাবশালীদের দখলে’

জাকারিয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জ

শাখা বরাক নদী এখন মরা খাল

হবিগঞ্জের শাখা বরাক নদী দূষণ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শাখা বরাক নদী দখল-দূষণে এখন মৃত প্রায়। একটা সময় যখন বড় বড় নৌকা পাল তুলে চলত নদীটি দিয়ে। জেলেদের জালে ধরা পড়ত বড় বড় দেশি প্রজাতির মাছ। কালের পরিক্রমায় সেই দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে ২০২০ সালে শাখা বরাক নদীটি সচল ও প্রবাহমান করতে নবীগঞ্জ পৌরসভা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, নবীগঞ্জ ভূমি অফিসসহ জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা উদ্যোগ নেন। তালিকা প্রণয়ন করা হয় অবৈধ দখলদারদের। পরে বিভিন্ন বাসা-মার্কেটে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয় নদীর জায়গা। শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। তবে কয়েকদিন উচ্ছেদ কার্যক্রম চলার পরপরই হঠাৎ বেড়ে যায় প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণ। যার প্রভাব পড়ে উচ্ছেদ কার্যক্রমে। এক পর্যায়ে  সেটা স্থগিত হয়। যা পরে আর সচল হয়নি। সরেজমিনে দেখা যায়, এক সময়ের খরস্রোতা নদীটি যেন এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এর এমন কোনো স্থান নেই, যে অংশটুকু ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়নি। আর যেখানে ময়লা নেই, সে স্থানটুকু চলে গেছে প্রভাবশালীদের দখলে। এর মধ্যে নবীগঞ্জ ডাক বাংলোর সামনে, সবজি বাজারের পেছনে, নোয়াপাড়া পয়েন্টে, শিবপাশা ব্রিজ ও হাসপাতাল-সংলগ্ন এলাকা সবচেয়ে বেশি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সেখানে দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ নদীর তীরের বাসিন্দারা।

স্থানীয়রা বলছেন, এক সময়ের উত্তাল-খরস্রোতা শাখা বরাক নদীর বেশিরভাগ জায়গা প্রভাবশালীদের দখলে। তারা বলছেন, একদিকে দখল অন্যদিকে দূষণের কারণে সামান্য বৃষ্টি হলেই চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে এখানকার বাসিন্দাদের। আর মুসলধারে বৃষ্টি হলে তলিয়ে যায় এর পাড়ের অনেক বাসা-বাড়ি ও রাস্তা-ঘাট। তাদের অভিযোগ, নবীগঞ্জ শেরপুর সড়কের ১ নম্বর ব্রিজের নিচ দিয়ে যে খালটি শিবপাশা ঠাকুর পাড়ার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নোয়াপাড়া-শাখা বরাক নদীতে মিলিত হয়েছে এর অনেকটাই এখন দখলদারদের কবলে চলে গেছে।

রহিম উদ্দিন (৭০) নামে এক বৃদ্ধ জানান, আমরা দেখেছি বড় বড় নৌকা শত শত মণ ধান নিয়ে শাখা বরাক নদী দিয়ে যেতে। এতে ধরা পড়ত বড় বড় মাছও। কিন্তু এখন সেই দৃশ্য কল্পনাতীত। তিনি বলেন, দখল-দূষণের কারণে এখন বৃষ্টি এলেই বাসাবাড়িতে পানি উঠে যায়।

নাবেদ মিয়া জানান, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জন্যই নদীটির এমন অবস্থা। কর্তৃপক্ষ আইনের প্রয়োগে কঠোর হলে এমনটা হতো না। তিনি বলেন, আমরা চাই দ্রুত যেন নদীটিকে তার পুরনো যৌবন ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে নবীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছাবির আহমদ চৌধুরী বলেন, আশা করছি, আবারও পৌরসভার উদ্যোগে দ্রুত অভিযান শুরু হবে।

তবে শুধু ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারই নয়, যারা সরকারি জায়গা দখল করে নদীকে বাধাগ্রস্ত করছেন তাদের কাছ থেকে নদী উদ্ধার করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর