মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

২০৪ ইটভাটার অবৈধ ১৮৩টি

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

২০৪ ইটভাটার অবৈধ ১৮৩টি

নওগাঁয় ইটভাটায় ব্যবহার হচ্ছে কয়লার পরিবর্তে কাঠ ও ফসলি জমির টপসয়েল

পরিবেশ আইন অমান্য করে নওগাঁয় যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ইটভাটা। জেলার ২০৪টি ইটভাটার মধ্যে ১৮৩টি অবৈধ। অধিকাংশ ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে ফসলের খেতে আর বসতি এলাকায়। এর ৯০ শতাংশ ভাটায় অনুমোদন ছাড়াই চলছে চুল্লি, জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কয়লার পরিবর্তে কাঠ, ফসলি জমির টপ-সয়েল। শুধু তাই নয়; কোনো কোনো ভাটায় বসানো হয়েছে স’মিল। অপরিকল্পিত ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ার প্রভাবে ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। এ এলাকার মানুষের শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। জানা গেছে, নওগাঁ সদর উপজেলায় ৩৫টি, মান্দায় ৩৫টি, বদলগাছীতে ৩০টি, রানীনগরে ৯টি, আত্রাইয়ে ১৯টি, মহাদেবপুরে ২১টি, নিয়ামতপুরে ৫টি, পতœীতলায় ২১টি, ধামইরহাটে ১৭টি, পোরশায় ১০টি, সাপাহারে ২টি ইটভাটা রয়েছে। তবে নিয়ামতপুর, সাপাহার, পোরশা, বদলগাছী, মান্দা ও সদর উপজেলায় ভাটায় ব্যবহারের জন্য অবাধে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির টপ-সয়েল। ফলে ফসলি জমি হারাচ্ছে উর্বরতা শক্তি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফসলি খেত আর বসতি এলাকায় বেআইনিভাবে গড়ে তোলা হয়েছে জেলার অধিকাংশ ইটভাটা। আবাসিক এলাকা থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ ইটভাটা স্থাপনে তা মানা হয়নি। আবার প্রতিটি চিমনি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ উঁচু করার কথা থাকলেও অনেকেই তা বানায়নি। এ ছাড়া প্রায় প্রতিটি ইটভাটায় মজুত করা হয়েছে জ্বালানি কাঠ। যা ইট পোড়ানোর কাজে ব্যবহার করা হয়।

সাগর আলী, কছিমুদ্দিন মন্ডলসহ কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, ইটভাটার কালো ধোঁয়ার ক্ষতিকর প্রভাবে নষ্ট হচ্ছে আম, জাম, কাঁঠাল, কলাসহ জমির ধান, শাক-সবজি, গাছপালা। শুধু তাই নয়; মানুষের শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ হচ্ছে। আর সরাসরি বিরূপ প্রভাব পড়ে প্রকৃতি ও জনজীবনে। ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিক সাইফুল বারী, তুহিন জানান, আগে কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানো হলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের জন্য ভাটায় স’মিল বসিয়ে গাছ কেটে কাঠ দিয়ে ইট পোড়াচ্ছে। কাঠ দিয়ে ইট পোড়ালে ইটের রং ভালো হলেও কালো ধোঁয়ায় ফলমূলসহ মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলোতে প্রশাসনের মনিটরিং নেই। এ ছাড়া ইটভাটাগুলো বিরূপ প্রভাবের ফলে আম, নারিকেল, ধানসহ সব ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সরকারিভাবে ব্লক ইট ব্যবহারের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে সবাই উপকৃত হব। জেলা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মলিন মিয়া বলেন, জেলায় মোট ২০৪টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে ১৮৩টি অবৈধ ইটভাটা। প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। অবৈধ ইটভাটাগুলো ভেঙে দেওয়াসহ নানা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দ্রুত এসব অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।

সর্বশেষ খবর