শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
পাবনার নগরবাড়ী ঘাট

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কয়লা শ্রমিকরা

♦ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেই ♦ ফসলি জমিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শঙ্কা

পাবনা প্রতিনিধি

স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কয়লা শ্রমিকরা

পাবনার বেড়ায় কাঠফাটা রোদে মাথায় কয়লার ঝুড়ি নিয়ে জাহাজ থেকে কয়লা খালাসের কাজ করে যাচ্ছেন শত শত শ্রমিক। সারা গায়ে, চোখে-মুখে কয়লার আস্তরণ। নাকে কোনো মাস্ক নেই। এতে তারা রয়েছেন চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। এ ছাড়া উন্মুক্ত স্থানে কয়লা স্তূপ করে রাখায় পরিবেশ বিপর্যয় ও ফসলি জমিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শঙ্কা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। সরেজমিনে দেখা যায়, পাবনার বেড়া উপজেলার নগরবাড়ি ঘাটে শত শত শ্রমিক কয়লা বহনের কাজ করছেন। তাদের কোনো ধরনের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেই। কয়লা মাথায় নেওয়ার সময় হাতে একটি বোতাম দেওয়া হয় জাহাজ থেকে। একটি বোতাম অর্থ এক ঝুড়ি কয়লা বহন। এভাবে প্রতিটি বোতাম ৬ টাকা হিসাবে কাজ শেষে টাকা দেয় সরদাররা। সারা দিনে প্রায় ১০০ ঝুড়ি কয়লা বহন করে থাকেন কয়লা শ্রমিকরা। এর বেশিও টানেন অনেকে। প্রচ- গরমে এ অবস্থায় হাতমুখ না ধুয়ে তারা পান করছেন পানি। মাথা থেকে ঘাম ঝরে মুখে কালি লেপে যায়। এভাবে প্রতিনিয়ত কয়লা বহনের কারণে কয়লা শ্রমিকরা নানা রোগের ঝুঁকিতে পড়ছেন। একাধিক শ্রমিক বলেন, যখন গোসল করতে যাই তখন দেখি নাক-মুখের ভিতর খালি কয়লা। আগে            তিনবেলা ভাত খেতাম। এখন একবেলা খেলেই পেট ভরে যায়। শ্বাসকষ্টের সমস্যাও হয়ে গেছে। সোবাহান নামে এক শ্রমিক আক্ষেপ করে বলেন, জানি এই কাজে ম্যালা অসুখ হয়, কিন্তু কী করার আছে। পেটের দায়ে করতে হয়। বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মিলন মাহমুদ জানান, যারা কোনোরকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ছাড়াই কয়লা বহনের কাজ করেন তাদের শ্বাসকষ্ট, ক্ষুধামন্দা, ফুসফুস ক্যান্সার এমনকি ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও থাকে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যবসায়ীরা কয়লা কিনে নগরবাড়িতে লাইটার জাহাজে এনে উন্মুক্তভাবে বিক্রি করছেন। লোড-আনলোডের সময় ছাড়াও স্তূপ করা কয়লার গুঁড়া বাতাসে মিশে পাশের ফসলি জমিতে পড়ছে। এতে ওইসব জমি ফসল চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। তাছাড়াও রোদের তাপে কয়লার স্তূপে আগুন বা ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। একাধিক শ্রমিক জানান, পেটের তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে এ কাজ করতে হচ্ছে, শুধু পরিবার-পরিজন নিয়ে ভালো থাকার জন্য। দিনশেষে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মজুরি পান তারা। কয়েকজন কয়লা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলাপকালে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাদের পরিবেশ অধিদফতরের কোনো অনুমোদন নেই। পরিবেশ অধিদফতর পাবনার সহকারী পরিচালক নাজমুল হোসাইন বলেন, কয়লা আমদানি, রপ্তানি, বিপণন এবং সংরক্ষণ যথাযথ নিয়ম মেনে করতে হবে। নগরবাড়ি নৌবন্দর পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোরশেদুল ইসলাম বলেন, কয়লা ব্যবসায়ীরা উন্মুক্তভাবে কয়লা বিক্রি না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারা যদি প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করেন তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর