শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

হাসপাতালে চার গুণ রোগী

পটুয়াখালীতে ডায়রিয়ার প্রকোপ ♦ বেশি আক্রান্ত শিশু ও বয়স্ক

সঞ্জয় দাস লিটু, পটুয়াখালী

হাসপাতালে চার গুণ রোগী

শয্যা না পেয়ে বারান্দায় চিকিৎসা ডায়রিয়া রোগীর। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

‘সব কাজে ভূগর্ভস্থ ও ফুটানো পানির ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব’

 

পটুয়াখালীতে দিন দিন বেড়ে চলছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। হাসপাতালে রোগীর উপচেপড়া ভিড়। শয্যা না পেয়ে অনেকে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ভর্তি হওয়া রোগীর বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক।

সরকারি হিসাবে জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ভর্তি রয়েছেন ২৫৬ জন। আর এক সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৩৩ জন। এর মধ্যে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৮৪ জন। এখানে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ২১টি। শয্যার চেয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা চারগুণ। রোগীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন আক্রান্ত ও তাদের স্বজন। তবে গতকাল পর্যন্ত জেলায় ডায়রিয়ায় কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। এখন পর্যন্ত স্যালাইন সংকট দেখা না দিলেও যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিভাগ। প্রচ- গরমে পানি বাহিতসহ বিভিন্ন কারণে ডায়রিয়া বাড়ছে বলে দাবি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের। শিশুদের বুকের দুধের বাইরে অন্য খাবার না খাওয়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সরেজমিন দেখা যায়, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দার দুই পাশ হয়ে প্রবেশদ্বার পর্যন্ত এসে ঠেকেছে রোগীর অবস্থান। ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় ১৬ জন রোগী নতুন করে এ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। রোগী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখানে আসা বেশিরভাগ রোগই গ্রামের। যাদের অনেকে রান্নাবান্না ও থালাবাসন ধোয়ার কাজে পুকুর ও নদীর পানি ব্যবহার করেন।

দশমিনা উপজেলা থেকে গত বৃহস্পতিবার ভর্তি হয়েছে ১৫ মাসের মোরসালিন। তার মা রেশমা বেগম বলেন, দশমিনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়ার পর ছেলের বমি ও পাতলা পায়খান না কমায় এখানে এসেছেন। এখন বমি একটু কম। কিন্তু ছেলে সব সময় কান্না করছে। শয্যা পাইনি, মেঝেতে আছি। খুব গরম এবং লোকজনের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। দুর্গন্ধে থাকা মুশকিল হয়ে পড়েছে।

পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সিদ্ধার্থ শংকর দাস জানান, ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে শিশু ও বয়স্করাই বেশি আসছেন। তার মতে, ছয় মাসের নিচের বাচ্চাদের মায়েদের বুুকের দুধ পান করালে অনেকটা নিরাপদ থাকবে শিশুরা। এ ছাড়া পানিবাহিত রোগ সম্পর্কেও সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি। পটুয়াখালীতে ডায়রিয়া রোগী আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার এস এম কবির হাসান। তিনি জানান, দাবদাহ এবং পানির কারণে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে। সব কাজে ভূগর্ভস্থ ও ফুটানো পানির ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হবে। এখনো জেলায় স্যালাইন সংকট নেই বলে তিনি জানান। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত পটুয়াখালীতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৪০৬ জন। তবে কোনো রোগী মারা যায়নি।

সর্বশেষ খবর