রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

শাল-গজারি বনে রহস্যময় আগুন

পুড়ছে ঝোপঝাড় ♦ ধ্বংস হচ্ছে বন্যপ্রাণীর আশ্রয়স্থল

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

শাল-গজারি বনে রহস্যময় আগুন

‘রাতের আঁধারে আগুন দেওয়ায় শনাক্ত করা যাচ্ছে না দুর্বৃত্তদের’

টাঙ্গাইলের সখীপুরে শাল-গজারি ও সামাজিক বনে প্রায়ই ঘটছে রহস্যময় অগ্নিকান্ড। পুড়ছে ঝোপঝাড়, লতাপাতাসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গ। ফলে ধ্বংস হচ্ছে বন্যপ্রাণীর আশ্রয়স্থল। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। বিলুপ্ত হচ্ছে বনের নানা বনজ ও ঔষধি গাছ। পরিবেশ ভারসাম্য হারাচ্ছে জানান বিশেষজ্ঞরা। জানা যায়, প্রতি বছর চৈত্র-বৈশাখ মাসে রাতের আঁধারে বনের ভিতরে ঝরা পাতায় কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়, এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত বা আইনের আওতায় আনতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে গত সাত দিন বাগানে ঘুরে সখীপুর উপজেলার বহেড়াতৈল রেঞ্জের আমতৈল, হতেয়া রেঞ্জের হতেয়া, বাঁশতৈল রেঞ্জের নলুয়া বিটের পাহাড়কাঞ্চনপুর, দেওদিঘী, ডিবি গজারিয়া বিটের দেওবাড়ী, এমএমচালা বিটের সেগুন বাগান, শাল-গজারি এবং সৃজিত বনের ভিতর আগুনের আলামত দেখা যায়। অনেক স্থানে পশু ও পাখির আবাসস্থল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ধোঁয়ায় পাতা ঝরে পড়ায় বড় বড় গাছও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বনবিভাগ সূত্রে জানায় যায়, সখীপুরের চারটি রেঞ্জের ১৩টি বিটের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ১৫ হাজার একর জমিতে শাল-গজারি বন রয়েছে। চৈত্রের প্রচ- রোদে গাছের পাতা ঝরে পড়ে। সেই ঝরা পাতায় এক শ্রেণির অসচেতন মানুষ আগুন ধরিয়ে দেয়। পুড়ে যায় বনে জন্মানো ছোট গাছ, কচি লতাপাতা, বিভিন্ন কীটপতঙ্গ। বন্যপ্রাণীর ভয়ে ও বেঁচে থাকার তাগিদে লোকালয়ে বেরিয়ে পড়ে।

বনাঞ্চলের আশপাশের বাসিন্দারা জানান, বন থেকে লাকড়ি ও কাঠ সংগ্রহের জন্য কিছু দুষ্ট লোক ইচ্ছা করেই বনে আগুন দেয়। কেউ যাতে না দেখতে পায় সে জন্য তারা রাতে এ অপকর্ম করে। এ ছাড়া বনের পাশ দিয়ে মাদকসেবীরা যাওয়ার সময় তাদের ফেলে দেওয়া সিগারেট থেকেও আগুন ধরতে পারে ধারণা অনেকের। বন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্মকর্তারা মনে করেন, বনের জমি দখলে নিতে ও বন ধ্বংস করতে কুচক্রীরা ঝরা পাতায় আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায়। স্থানীয় বন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিনের বেলায় বিভিন্ন এলাকায় পাহারা দেন। ফলে রাতের আঁধারে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে দুর্বৃত্তরা। ভূগোল ও পরিবেশ বিষয়ক অধ্যপক ও হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ রহিজ উদ্দিন মিয়া বলেন, বনে আগুন দিলে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ নষ্ট হয়। ফলে আমরাই নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই। বনে কোনোভাবেই আগুন দেওয়া যাবে না। সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। বহেড়াতৈল রেঞ্জ কর্মকর্তা এ কে এম আমিনুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিনে বনের ১০-১২ স্থানে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছি। দিনে আমি এবং আমার স্টাফরা পাহারা দেই। রাতের বেলায় কে বা কারা আগুন লাগায় তাদের ধরতে পাচ্ছি না। বনে আগুন না দেওয়ার বিষয়ে স্থানীয়দের সচেতন করা হচ্ছে। আগুনের ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

সর্বশেষ খবর