সোমবার, ৬ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

সুপেয় পানি সংকটে মেহেরপুর

মাহবুবুল হক পোলেন, মেহেরপুর

সুপেয় পানি সংকটে মেহেরপুর

মেহেরপুর সদর ও গাংনী উপজেলার শতাধিক গ্রামের গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। গ্রামের সাধারণ মানুষ সুপেয় পানি সংগ্রহের জন্য ছুটছেন দূর-দূরান্তে। পানির জন্য কলস, জগ ও বালতি হাতে নারী পুরুষের লাইন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

মেহেরপুর সদর ও গাংনী উপজেলার মানিকদিয়া, আমতল, গাড়াডোব, তারানগর জয়পুরসহ শতাধিক গ্রামের গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। এতে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রামের বৌ-মেয়েরা কৃষি জমিতে সেচ দেওয়া নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহের জন্য দূর-দূরান্তে ছুটছে। এভাবে কানোরকম পারিবারের চাহিদা মেটাচ্ছেন তারা। এদিকে পানির অভাবে গৃহস্থালির কাজে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

জেলার জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর জানায়, আগে ভূগর্ভের ৫০-৬০ ফুট গভীরতায় পাওয়া যেত সুপেয় পানি। গত এক দশকে ক্রমেই পানির স্তর নেমে গেছে। এখন কোথাও কোথাও পানির জন্য যেতে হয় ৩০০ ফুটেরও বেশি গভীরে। মেহেরপুরে গভীর-অগভীর মিলিয়ে ৯ হাজার ৯১৩টি নলকূপ আছে। এর মধ্যে অকেজো হয়ে পড়ে আছে অর্ধেকের বেশি। তীব্র গরম, অনাবৃষ্টি, ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা ও কুকুর-খাল-বিল ভরাটের কারণে এমন পরিস্থিতি। মানিকদিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমার বাড়ির টিউবওয়েলে ১৫-২০ দিন ধরে পানি নেই। একই অবস্থা মানিকদিয়া গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই। খাবার পানির জন্য এখানে হাহাকার শুরু হয়েছে। মানিকদিয়ার কৃষক রহিম উদ্দিন বলেন, শুধু টিউবওয়েলই নয়, স্যালো মেশিনেও পানি কম উঠছে। মাঠে আগে যেখানে এক বিঘা জমি ভেজাতে ২ ঘণ্টা লাগত, এখন লাগছে ৬ ঘণ্টা। পাশে মাথাভাঙ্গা নদী আছে। নদীও শুকিয়ে গেছে।

স্থানীয় ষোলটাকা ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার পাশা বলেন, তার ইউনিয়নে প্রায় ৬ হাজার টিউবওয়েল আছে। ইউনিয়নের চার-পাঁচ গ্রামে চৈত্র, বৈশাখ ও জৈষ্ঠ মাসে টিউবওয়েলে পানি থাকে না। এ সমস্যা তিন-চার বছর ধরে চলছে। পরিবেশবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণে খোলা জায়গা ও জলাধার কমে যাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। ফলে পানির সংকট দেখা দিয়েছে, যা আমাদের জন্য অশনিসংকেত। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ভূ-পৃষ্ঠীয় পানি বা সারফেস ওয়াটারের ব্যবস্থা করা সম্ভব না হলে আগামীতে সংকট আরও বাড়তে পারে। তিনি বলেন, কয়েক বছরে বিভিন্ন এলাকায় পানির স্তর ১০-১৫ ফুট নেমে গেছে। ফলে অকেজো হয়ে পড়েছে অনেক নলকূপ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হান্নান জানান, আন্তজেলা নদীগুলোর সংযোগ করে সব সময় প্রবাহ রাখার মাধ্যমে ভূস্তরে পানির রিজাভ বাড়ানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তারা।

সর্বশেষ খবর