রবিবার, ১২ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

নড়বড়ে সাঁকোয় পারাপার

♦ দুর্ভোগে লক্ষাধিক মানুষ ♦ বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা

সাইফুল মিলন, গাইবান্ধা

নড়বড়ে সাঁকোয় পারাপার

গাইবান্ধা সদর উপজেলার একদিকে ঘাগোয়া অন্যদিকে গিদারি ইউনিয়ন। মাঝখানে প্রবাহিত মানস নদ। স্থানীয়দের দীর্ঘদিন দাবি থাকলেও নদের ওপর হয়নি সেতু। এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশ-কাঠের সাঁকো নির্মাণ করেন। দুই ইউনিয়নের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা এই সাঁকোটিও এখন নড়বড়ে হয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছেন ১০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ। এ ছাড়া তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৩০০-৪০০ শিক্ষার্থী প্রতিদিন ভয়ে ভয়ে সাঁকো পারাপার হয়ে বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, যাগোয়া ও গিদারি ইউনিয়নের মানুষ একসময়ে বর্ষায় নৌকায় এবং শুষ্ক মৌসুমে হেঁটে পার হতো মানস নদ। ২০১৩ সালে দুই ইউনিয়নের বাসিন্দারা মিলে নদের ওপর কাঠের সাঁকো নির্মাণ শুরু করেন। কেউ টাকা, কেউ বাঁশ, কেউ গাছ, কাঠ, রশি দিয়ে সহায়তা করেন। খরচ হয় প্রায় ৩ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি নির্মাণকাজ শেষ হয়। তখন থেকে সাঁকোর ওপর দিয়ে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, অটোরিকশা-ভ্যান চলাচল করত। বিগত ১০ বছরে আর মেরামত করা হয়নি। গত বছর বর্ষায় সাঁকোটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সাঁকোর অনেক খুঁটির নিচের অংশ নষ্ট হয়েছে। কয়েকজন একসঙ্গে উঠলে এটি দোল খায়। ঝুঁকি এড়াতে রিকশা-ভ্যান ও অটোরিকশা চলাচল না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, অনেকে হেঁটে সাঁকো পার হচ্ছেন। বাইসাইকেল চালিয়ে যচ্ছেন কেউ কেউ। মোটরসাইকেল পার করা হচ্ছে ঠেলে। রিকশা-ভ্যান চলাচল বন্ধ থাকায় লোকজন মালপত্র মাথায় নিয়ে নদী পাড় হন। স্থানীয়রা জানান, গত বর্ষা মৌসুমে নদীর স্রোতে কাঠের খুঁটি নড়বড়ে হয়ে যায়। দুর্ঘটনা এড়াতে সবাই ধীরে পার হন। রাতে পারাপারে বেশি সমস্যা হয় বেশি।

কাটিহারা গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হক বলেন, এখানে সেতু নির্মাণে অসংখ্যবার জনপ্রতিনিধিদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। কোনো কাজ হয়নি। গৃহবধূ আলিফা বেগম বলেন, পার হবার ধরলে সাঁকো নড়ি ওঠে। বেটি হামার প্লেতে পড়ে। বেটিক কোলোত নিয়ে সাঁকো পাড় হবার গেলেই ভয় পায়। চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ব্রিজ হলে হামরা একলায় একলায় স্কুলোত যাবার পামো। এখন ভয় লাগে। কাটিহারা গ্রামের ভ্যানচালক রাজ্জাক মিয়া বলেন, বোঝাই ভ্যান নিয়ে সাঁকো পাড় হওয়া যায় না। খালি মানুষ হাঁটি গেলেই নড়ে। ভোটের আগে সগলে বিরিজ বানে দিব্যার চায়। ভোট হলে আর নাগেল পাওয়া যায় না। মন্ডলপাড়ার স্কুলশিক্ষক ময়নুল ইসলাম বলেন, সাঁকো ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও পারাপার হতে হচ্ছে। কারণ, জেলা শহরে যেতে বিকল্প পথ অনেক ঘুরতে হয়। ঘাগোয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর জামান ও গিদারির হারুন-অর-রশিদ বলেন, এখানে সেতু নির্মাণের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। সেতু নির্মাণে ব্যবস্থা নিতে এলজিইডিকেও তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) গাইবান্ধা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলাম বলেন, কাটিহারায় মানস নদের ওপর সেতু নির্মাণে উপজেলা প্রকৌশলীকে প্রকল্প তৈরি করতে বলা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর