শুক্রবার, ১৭ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

অস্তিত্ব সংকটে পাম নদ

♦ বাঁধ দিয়ে পুকুর নির্মাণ ♦ চলছে মাছ ও ধান চাষ ♦ সেতু ঘেঁষে এস্কেভেটর দিয়ে খনন

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

অস্তিত্ব সংকটে পাম নদ

অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে পঞ্চগড় দিয়ে বয়ে চলা পাম নদ। এ নদের বুকে বাঁধ দিয়ে এবং বিশাল পুকুর খনন করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। অনেক স্থানে ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে।

নদের সরু গতি প্রবাহ পরিবর্তন করে ব্যক্তি মালিকানার জমির ওপর দিয়ে প্রবাহ নেওয়া হয়েছে। এ নদের ওপর নির্মাণ করা সেতুর নিচে এস্কেভেটর দিয়ে খনন করে বালু ও মাটি তোলা হয়েছে। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে সেতুটি। এ নদের গতিপথ পরিবর্তন করে দেওয়ায় নিম্নআয়ের অন্তত ৫০টি পরিবারের ঘরবাড়ি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। তাদের দিন কাটছে দুশ্চিন্তায়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পাম নদ পঞ্চগড় জেলা সদরের ধাক্কামারা এলাকা থেকে উৎপত্তি হয়ে বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের গড়েরডাঙ্গা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সোনাচান্দি এলাকায় করতোয়ার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। নদটির দৈর্ঘ্য সাড়ে ৪ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২০ মিটার। স্থানীয়রা জানান, আগে সবসময় পানিপ্রবাহ থাকত এ নদে। এখন প্রায়মৃত। এখানে চাষাবাদে ক্ষতি হচ্ছে নদের। কৃষিকাজে এ নদের পানি ব্যবহার করা হতো। বর্ষাকালে বিপুল পরিমাণ পলি নিয়ে আসত। আশপাশের জমির উর্বরতা বাড়ত। তারা আরও জানান, আগে প্রচুর পরিমাণ দেশি মাছ পাওয়া যেত এ নদে। এখন আর মাছ পাওয়া যায় না। পামেরপাড়ার যে স্থানে পুকুর খনন করা হয়েছে নদটির গতিপথ ছিল তার মাঝ দিয়ে। নদের বুকে শুষ্ক মৌসুমে ধান চাষ আর বর্ষাকালে পুকুরে মাছ চাষ করেন পামেরপাড়া এলাকার এক প্রভাবশালী। নদের গতিপথ পরিবর্তন করে ছোট্ট ক্যানেলে পরিণত করা হয়েছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা ওয়াজেদ আলী বলেন, নদের মাঝে পুকুর খনন করে চারপাশে বাঁধ দিয়ে এখন গতিপথ পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে আমাদের জমির ওপর দিয়ে। গত বছর বর্ষায় আমার ভিটায় ভাঙন দেখা দেয়। এবার হয়তো ঘরবাড়ি চলে যাবে। ওই এলাকার বৃদ্ধ জামাল উদ্দিন বলেন, নদী তো এখন আর নদী নেই। নদের পানি যায় এখন আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে।

নদে পুকুর খননকারী জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, নদের ওই জমি অর্পিত সম্পত্তি। আদালতের মাধ্যমে তা আমি পেয়েছি। মাছ চাষ করার জন্য চারপাশ বেঁধে পুকুর করেছি। নদ নদের জায়গায় আছে। আর আমি অত গভীর করছি না যে সেতুর ক্ষতি হবে। তারা যেসব অভিযোগ করেছে তা সত্য নয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ বর্মণ বলেন, আমরা এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি। নদের জমি দখল করলে বা নদের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বোদা ইউএনও শাহরিয়ার নজির বলেন, আমরা বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। তাদের আগের অবস্থানে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। তারা এক সপ্তাহ সময় পাবেন। এর মধ্যে তা না করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর