মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

নদী খননে সুফল মেলেনি

♦ ধলেশ্বরীর বুকে কুয়া করে পানি উত্তোলন ♦ ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন পুরোটাই গচ্চা

মো. কাবুল উদ্দিন খান, মানিকগঞ্জ

নদী খননে সুফল মেলেনি

মানিকগঞ্জের ধলেশ্বরী নদী ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা হলেও তা কোনো কাজে আসছে না। মাত্র তিন বছর আগে নদীটি খনন করা হয়। এখন শুষ্ক মৌসুমে নদীর বুকে কুয়া খনন করে পানির চাহিদা মেটাতে হচ্ছে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের। তারা অভিযোগ করে বলেছেন, পুরো টাকাই গচ্চা গেছে। কাজ কিছুই হয়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, নারীরা ছোট কলসের গলায় রশি বেঁধে কুয়া থেকে পানি তুলছেন। এক কলসি পানি তুলতে অনেক সময় লাগে। তাই এলাকার লোকজন পালাক্রমে পানি সংগ্রহ করে থাকেন। যা দেখে মনে হয়, কোনো মরুভূমি থেকে লোকজন পানি সংগ্রহ করছেন। অথচ মাত্র তিন বছর আগে ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীটি খনন করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। নদীপাড়ের লোকজনসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরো টাকাটাই গচ্চা গেছে। লোকদেখানো খননে লাভ হয়েছে ঠিকাদার আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিøষ্টদের। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সংশ্লিøষ্টরা বলছেন, ২৫ বছর আগেও এই নদীতে সারা বছর পানির প্রবাহ থাকত। ১৯৯৮ সালের ভয়াবহ বন্যার পর থেকে পলি পড়ে নদীটি দ্রুত ভরাট হতে থাকে। ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও কমিটির দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রামের ফলে কালীগঙ্গা নদী থেকে ধলেশ্বরীর উৎসমুখ সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি থেকে সিংগাইর উপজেলার ইসলামপুর পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার খনন শুরু হয় ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে। পাঁচটি প্যাকেজে ৭৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ সম্পন্ন হয় ২০২১ সালের শেষদিকে। ধলেশ্বরী নদী বাঁচাও আন্দোলনের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বিশ্বাস বলেন, পরিকল্পিতভাবে খনন না করায় নদীর অবস্থার উন্নতি হয়নি। বর্ষা মৌসুমের তিন মাস ছাড়া বাকি সময় কালীগঙ্গা থেকে ধরেশ্বরী নদীতে পানি ঢুকতে পারছে না। দেখা যায়, কালীগঙ্গা নদীতে পানির কিছু প্রবাহ থাকলেও চরের জন্য ধলেশ্বরী নদীতে ঢুকতে পারছে না। এখন নদী পানিশূন্য। পড়ে রয়েছে ভাঙাচোরা নৌকা। স্থানীয়রা নদীতে চরাচ্ছেন গরু-ছাগল। কোথাও জ্বালানির জন্য গরুর গোবর শুকানো হচ্ছে।

ভুক্তভোগীরা জানান, টিউবওয়েলের পানিতে আয়রন থাকায় রান্নার কাজ করা যায় না। তাই শুকনো নদীর বুকে কুয়া খুঁড়ে রান্নাবান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য পানি তোলা হয়। ধলেশ্বরী নদী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জাগির এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে। এখানে কিছু পানি দেখা যায়। তবে কারখানার বর্জ্য ফেলার কারণে এ পানি ব্যবহার করা যায় না। এর প্রতিবাদ করে কোনো লাভ হয়নি।

ধলেশ্বরী নদীতে পানি না থাকার কথা স্বীকার করে মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাঈন উদ্দীন বলেন, মূল নদীতে (কালীগঙ্গা) পানির স্তর নেমে গেছে। তাই ধলেশ্বরীতে পানি ঢুকতে পারছে না। শাখা নদীতে পানি রাখতে হলে মূল নদীও খনন করতে হবে। ধলেশ্বরী নদী আবার খননের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই খনন শুরু হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর