বুধবার, ২২ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

গাছে তার বেঁধে বিদ্যুৎ সংযোগ

♦ দুর্ঘটনার আশঙ্কা ♦ টাকা তুলেও বিদ্যুতের খাম্বা দেওয়া হয়নি ১০ বছরে

ভোলা প্রতিনিধি

গাছে তার বেঁধে বিদ্যুৎ সংযোগ

গাছে গাছে তার বেঁধে ভোলায় শত শত গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের খাম্বা দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ১০ বছরেও তা দেওয়া হয়নি। উল্টো এসব কথা বলতে গেলে হেনস্তার শিকার হতে হয় গ্রাহকদের। বিদ্যুৎ পেয়েই সন্তুষ্ট থাকতে বলা হয়। এভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ায় মাঝে মধ্যেই ঘটে দুর্ঘটনা। আতঙ্কে থাকতে হয় এলাকাবাসীকে। বিধিবহির্ভূতভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে স্বীকার করলেও আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলতে রাজি হননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা জানান, ভোলা শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বাপ্তা মুছাকান্দি গ্রাম। এ গ্রামে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে গাছে গাছে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। কোথাও কোথাও চিকন বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুতের তার বাঁধা। কিন্তু বাঁশের খুঁটির নিচের অংশ নেই, ভেঙে গেছে। বেশির ভাগ জায়গায়ই গাছের সঙ্গে বেঁধে হাই ভোল্টেজ তার দূর দূরান্তে নেওয়া হয়েছে। ওই তার থেকেই সংযোগ দেওয়া হয়েছে গ্রাহকদের। স্থানীয়রা জানান, এটা পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (পিডিবি) বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন। যা বর্তমানে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) আওতায়। এসব তার দীর্ঘদিন গাছের সঙ্গে বাঁধা থাকায় অনেক স্থানে লিক হয়ে গছে। স্থানীয়রা তা কোথাও জানতে পারলে টেপ পেঁচিয়ে রাখেন। অনেক সময় ঝড় বৃষ্টিতে তার ছিঁড়ে যায়। তখন আবার জোড়াতালি দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। কখন কে বিপদে পড়ে এমন শঙ্কা থাকে সবার মনে। বিশেষ করে যখন গাছে গাছে বিভিন্ন ফল পাকে তখন গ্রামের শিশু-কিশোররা বেশি ঝুঁকিতে থাকে, বলছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় আবুল কাশেমসহ অনেকেই জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ নেওয়ার সময় বেল্লাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি খাম্বা দেওয়ার কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা তুলেছিল। কিন্তু ১০ বছরেও বিদ্যুতের খাম্বা দেওয়া হয়নি। বেল্লাল হোসেন জানান, তিনি এলাকাবাসীর পক্ষে টাকা তুলে বিদ্যুৎ অফিসের এক লোককে দিয়েছিলেন। তখন বিদ্যুৎ অফিসের লোকেরা গাছে গাছে বেঁধে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছিল। তারা বলেছিলেন, পরে খাম্বা পুঁতে বিদ্যুতের তার তাতে বেঁধে দেওয়া হবে। কিন্তু আজও খাম্বা দেওয়া হয়নি। এখন অফিসে ওই সময়ের কেউ এখন নেই। বিদ্যুতের নির্ধারিত খাম্বা বা খুঁটি না থাকায় অনেক নিচু দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে তার নেওয়া হয়েছে। কোথাও আবার বাগানের মধ্য দিয়ে মানুষের মাথা সমান উচুতে বিভিন্ন গাছের সঙ্গে বেঁধে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুতের তার। এতে প্রায় সময়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। ইয়াছিন নামে এক লোক জানান, তাদের পুকুরপাড়ে মাথা সমান নিচু দিয়ে গাছের সঙ্গে বিদ্যুতের তার। একদিন ওই পথে যাওয়ার সময় তার আম্মা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পুকুরের মধ্যে ছিটকে পড়েছিলেন। পায়ে জুতা এবং পুকুরে পানি কম থাকায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে তিনি রক্ষা পান।

ভোলা ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ সাংবাদিকদের জানান, তার পূর্ববর্তী কর্মকর্তারা কীভাবে বাগানে গাছে বেঁধে বিদ্যুতের লাইন টেনেছেন তা বোধগম্য নয়। এটা বিধিবহির্ভূত এবং অন্যায় বলেও স্বীকার করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর