শুক্রবার, ২৪ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

সেতু নির্মাণ শেষ হয়নি তিন বছরেও

♦ নদী পারাপারে নির্ভর করতে হয় বাঁশের সাঁকোয় ♦ দুর্ভোগে হাজারো মানুষ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

সেতু নির্মাণ শেষ হয়নি তিন বছরেও

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কৃষ্ণনগর গ্রামের পাশে তিতাস নদের ওপর সেতু নির্মাণকাজ শেষ হয়নি সাড়ে তিন বছরেও। নদ পারাপারে ওই এলাকার মানুষকে নির্ভর করতে হয় বাঁশের সাঁকোর ওপর। মাঝেমধ্যে সাঁকো থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থী, অসুস্থ, বয়ঃবৃদ্ধসহ ওই এলাকার হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে। স্থানীয়রা জানান, সেতুর অভাবে আখাউড়ার কৃষ্ণনগর গ্রাম থেকে উপজেলা সদরে যাতায়াতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বরিশল গ্রামের রাস্তা ব্যবহার করতে হয়। এ এলাকার মানুষ কৃষিনির্ভর। সেখানকার নানা রকমের সবজি আখাউড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি হয়। ওই এলাকার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ২০২০-২১ অর্থবছরে শুরু হয় তিতাস নদের ওপর সেতু নির্মাণকাজ। কিন্তু কাজের ধীরগতিতে হতাশ হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ২০৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। এ ছাড়া অর্থাভাবে সেতুর সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াও শেষ হয়নি এখনো। স্থানীয়রা জানান, প্রথমদিকে যে গতিতে শুরু হয়েছিল মনে হয়েছে এক বছরের মধ্যেই শেষ হবে সেতুর কাজ। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর কাজ কচ্ছপগতিতে চলতে থাকে। কোনো মাসে তিন দিন, কোনো মাসে এক দিন- এভাবেই চলছে সেতুর কাজ। সেতুর অভাবে ওই এলাকায় উৎপাদন করা সবজি বাজারজাত করতে সমস্যা হয়। বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদেরও। কখনো কখনো সাঁকো থেকে শিক্ষার্থীদের পানিতে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) সূত্রে জানা যায়, ‘পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের পাশে তিতাস নদের ওপর ২০৮ মিটার আরসিসি আর্চ গার্ডার সেতু নির্মাণকাজের চুক্তি স্বাক্ষর হয় ২০২০-২১ অর্থবছরে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজ কাজটির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় ১৯ কোটি ২ লাখ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী কাজ শেষ করার সময় ছিল ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তবে নির্ধারিত সময়ে নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। দ্বিতীয়বারের মতো চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়।

কৃষ্ণনগর গ্রামের কৃষক রহিজ মিয়া বলেন, প্রায় চার বছর হতে চলল সেতুর কাজ শেষ হয়নি। সবজি বাজারে নিতে খুব ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কৃষক বাবুল মিয়া বলেন, আমরা অবহেলার শিকার। খবর কেউ নেয় না। যেভাবে কাজ হচ্ছে তাতে আরও যে কত বছর লাগে। আমাদের ভোগান্তির শেষ হবে না। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ঘাটিয়ারা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কৃষ্ণনগর গ্রামের পলি আক্তার বলে, সাঁকো দিয়ে পারাপারের সময় ভয়ে থাকি কখন পড়ে যাই। পড়ে যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে। সেতুটি হলে আমাদের স্কুলে যাতায়াতে সুবিধা হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স হাসান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী খাইরুল হাসান বলেন, সেতুতে নদীর মাঝখানে আর্চ ডিজাইন রয়েছে, তা ফিটিংস করে ঢালাই শেষ হলেই আমাদের কাজ মোটামুটি শেষ হবে। এখন পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। তিন-চার মাসের মধ্যেই কাজটা শেষ করতে পারব। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের অভাবে সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের জমি এখনো আমরা বুঝে পাইনি।

ধরখার ইউপি চেয়ারম্যান সাফিকুল ইসলাম বলেন, কাজ বিলম্বের বিষয়টি আইনমন্ত্রীও অবগত রয়েছেন। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) আখাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে সেতুর ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সংযোগ সড়কের জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। অর্থ মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যাবে।

 

সর্বশেষ খবর