শুক্রবার, ২৪ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা

গড়ে ওঠেনি বর্জ্যব্যবস্থাপনা

নেই পরিকল্পিত ড্রেনেজব্যবস্থা - পানি জমে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্ভোগে শহরবাসী

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

গড়ে ওঠেনি বর্জ্যব্যবস্থাপনা

বগুড়া পৌরসভায় দেড় শ বছরেও পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। শহরের প্রায় সব সড়কে খানাখন্দ, ছোটবড় গর্ত তৈরি হয়েছে। পরিকল্পিত ড্রেনেজব্যবস্থা না   থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমে যায়। বৃষ্টি শেষ হলেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা জমে থাকে পানি। রাস্তায় চলাচলে প্রায়ই ঘটে দুর্ঘটনা। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় শহরবাসী ও পথচারীদের। উল্লেখ্য, ১৮৭৬ সালে বগুড়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এখানে ছিল ১২টি ওয়ার্ড। ২০০৭ সালে ৬৯ দশমিক ৫৬ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে তা ২১টি ওয়ার্ডে বর্ধিত করা হয়। পৌরসভার প্রধান কাজ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সড়কে বাতি ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন। তবে দেড় শ বছরেও বর্জ্য সংগ্রহে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত কোনো ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি দেশের অন্যতম বৃহৎ এ পৌরসভায়। করতোয়া নদীর তীরে গড়ে ওঠা উত্তরবঙ্গের রাজধানী খ্যাত এ শহরে এখনো যেখানে সেখানে ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। এ পৌরসভায় প্রায় সাড়ে ১০ লাখ মানুষ বসবাস করে। এ পরিমাণ জনবসতি থেকে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ৩০০ টন ময়লা-আবর্জনা জমা হয়। মানুষের ফেলে দেওয়া এসব বর্জ্য ঘুরেফিরে পড়ে থাকছে লোকালয়েই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০৭ সালের আগে বগুড়া শহরের প্রতি মহল্লায় ডাস্টবিন ছিল। পৌরবাসী বাসাবাড়ির আবর্জনা সেখানে ফেলত। পরে পরিবেশ রক্ষায় ডাস্টবিন সরিয়ে ফেলা হয়। ভ্যানে ভ্রাম্যমাণ ডাস্টবিন চালু করে পৌরসভা। এ কাজের জন্য গঠন করা হয় মহল্লাভিত্তিক কমিউনিটি বেইজড্ অর্গানাইজেশন (সিবিও)। এ সংগঠনের মাধ্যমে ভ্যানগাড়িতে করে ময়লা নিয়ে শহরের বিভিন্ন ট্রান্সফার স্টেশনে রাখা হয়। সেখান থেকে গারবেজ ট্রাকে পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ময়লা নিয়ে গিয়ে ফেলেন ভাগাড়ে। এদিকে বুধবার বৃষ্টি হলে হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায় শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথাকেন্দ্রিক সড়কগুলো। সাতমাথা থেকে কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, শেরপুর সড়ক, স্টেশন সড়ক, পার্ক রোড, শেরপুর সড়কের কলোনি বাজার এলাকা, খান্দার সড়ক, গালাপট্টি সড়ক, টেম্পল সড়ক ছাড়াও কাঁঠালতলা ফতেহ আলী বাজার সড়ক, নওয়াববাড়ি সড়ক, চকযাদু ক্রস লেন-বাদুড়তলা সড়ক, বড়গোলা, কাটনারপাড়া সড়কে জমে যায় হাঁটুপানি। দুই পাশের নালার ময়লা-আবর্জনায় ভরা নোংরা পানি উপচে পড়ে এসব সড়কে। সেই পানি ঢুকে পড়ে বাসাবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও। পৌরবাসীর অভিযোগ, পরিকল্পিত ড্রেনেজব্যবস্থা না থাকায় শহরের এমন বেহাল দশা। বৃষ্টির পানি ড্রেন দিয়ে সঠিকভাবে প্রবাহিত হয় না। ভারী বর্ষণ হলে শহরজুড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এতে দুর্ভোগে পড়তে হয় যানবাহনের চালক, শিক্ষার্থীসহ পথচারীদের। এ শহরে বৃষ্টির পানি জমে দুর্ভোগের চিত্র দীর্ঘদিনের। বনানী থেকে মাটিডালি পর্যন্ত প্রধান সড়কের দুই পাশে পানি নিষ্কাশনের নালা অত্যন্ত সরু; যা সারা বছর ময়লা-আবর্জনায় ভরে থাকে। শহরের অন্য সড়কেও পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত নালা নেই। এ ছাড়া করতোয়া নদীর দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠায় শহর থেকে পানি বেরোতে পারছে না। বিভিন্ন সময় ড্রেন পরিষ্কার করা হলেও পরে আবারও ময়লা-আবর্জনায় ভরে যায়। বগুড়া পৌরসভা সূত্র জানান, অধিকাংশ সড়কে ড্রেন সংস্কার করা হয়েছে। যে স্থানে সমস্যা রয়েছে সেগুলো দ্রুত সমাধান করা হবে। বৃষ্টির সময় বগুড়াবাসীর যেন দুর্ভোগ না হয় সেজন্য পৌর কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। বগুড়া পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, এ পৌরসভায় জনবল কম। নতুন কোনো প্রকল্প দেওয়া হয়নি। ফলে অনেক উন্নয়নে পিছে পড়ে যাচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট সদিচ্ছা আছে। পর্যাপ্ত বাজেট পেলে আগামী অর্থবছরের মধ্যে পৌরসভার সব সমস্যা সমাধান করা হবে।

সর্বশেষ খবর