বর্ষা মৌসুম শুরু না হতেই যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনের কবলে পড়েছে পাবনার বেড়া উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম। এতে হুমকির মুখে পড়েছে এখানকার কমিউনিটি ক্লিনিক, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কবরস্থান, মসজিদ, বসতবাড়ি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেড়া উপজেলার হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের চর নাগদাহ, হাটাইল আরালিয়া চর সাড়াশি, লেওলাইপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম যমুনা নদীর তীরে। জ্যেষ্ঠের শুরুতেই এখানে দেখা দিয়েছে যমুনা নদীর ভাঙন। এরই মধ্যে ১৫ দিনে লেওলাইপাড়া গ্রামের অর্ধশত বিঘা ফসলি জমি ও চড়সাড়াশি গ্রামের ১৫/২০টি বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বসবাসের শেষ সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেকেই। সরেজমিনে দেখা গেছে, লেওলাইপাড়া গ্রামের নদীপাড়ের ফসলি জমি কিছু সময় পর পর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ছে নদীতে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা খোঁজখবর নিলেও ভাঙন ঠেকাতে কোনো কাজ শুরু করেনি। ভাঙন হুমকিতে রয়েছে এখানকার বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনা, কমিউনিটি ক্লিনিক, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ এলাকার মানুষের দিন কাটছে আতঙ্ক-উৎকণ্ঠায়। চরসাড়াশি ও চরনাগদাহ গ্রামের নদীভাঙন কবলিত অসহায় মানুষ অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।
চরনাগদাহ গ্রামের কৃষক হামিদুল হক বলেন, আমি পাঁচবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছি। বসতভিটাসহ প্রায় ১০ বিঘা জমি হারিয়েছি। সপ্তাহখানেক আগে আবারও বসতভিটা হারিয়েছি। এ দুর্দিনে কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। আমাদের গ্রামের পুরো একটি পাড়া নদীতে চলে গেছে। হাটাইল চরের কৃষক জয়েন উদ্দিন মোল্লা বলেন, এবার অসময়ে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। কয়েক দিন আগে আমার দুই বিঘা বোরো ধান ও এক বিঘা তিল খেত নদী গিলে খাইছে। আমি ১০ বার নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছি। আমাকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে এই নদী। নতুন বাড়ি করেছি, এক সপ্তাহ ভাঙন থাকলে এটাও হয়তো নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। নতুন ভারেঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আবু দাউদ জানান, দুই সপ্তাহ ধরে লেওলাইপাড়া গ্রামে ব্যাপক ভাঙন চলছে। কয়েকদিনেই অর্ধশতাধিক বিঘা ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে রয়েছে মুজিব বাঁধ, সরকারি স্কুল, কবরস্থান, মসজিদ, মাদরাসা, তিন গ্রামের কয়েক হাজার বসতবাড়ি। বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোরশেদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকার বলেন, নদীভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। অতি দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।