লালমনিরহাটে ট্রেনের ইঞ্জিন ও কোচ ঘোরানোর জন্য ব্রিটিশ আমলে প্রথম নির্মাণ করা হয়েছিল টার্ন টেবিল। প্রায় তিন দশক আগে এটি পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ সময় ধরে উল্টোদিকেই ট্রেন চালাতে হয়েছে চালকদের। তবে দীর্ঘদিন পর লালমনিরহাট রেলওয়ে যন্ত্র প্রকৌশল অধিদফতরের উদ্যোগে আবারও টার্ন টেবিলটি নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি এটির পরীক্ষা করা হয়েছে। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে টার্ন টেবিলটি।
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে দফতর সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৩ সালে লালমনিরহাটের টার্ন টেবিলটি পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়। দীর্ঘদিন পর নতুন করে এটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপকের (পশ্চিম) কার্যালয় থেকে প্রশাসনিক অনুমোদনের চিঠি দেওয়া হয়। পরে বিভাগীয় রেলওয়ে দফতরের প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) মো. তাসরুজ্জামান বাবুর নকশা ও প্রযুক্তিতে এটি তৈরি হয়। নির্মাণকাজ শুরু হয় চলতি বছরের জানুয়ারিতে। কাজ শেষ হয় মার্চ মাসে। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
জানা গেছে, ব্রিটিশরা ওই টার্ন টেবিলের নকশা ও নির্মাণ কৌশল সরিয়ে ফেলায় বাংলাদেশে আর এটি নির্মাণ করা হয়নি। টার্ন টেবিল না থাকায় ইঞ্জিন না ঘুরিয়ে উল্টোভাবে ট্রেন চালানো হচ্ছে। ফলে ইঞ্জিনের পেছনের দিকে বসায় আঁকাবাঁকা রেললাইনে চালকদের দেখতে অসুবিধা হয় এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে। তা ছাড়া একদিকে চলাচলের কারণে ঘর্ষণে ক্ষয় হচ্ছে রেলের চাকা। এতে বাড়ছে ট্রেন লাইন থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনা। এ সমস্যা সমাধানে দেশের এ প্রথম লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগ নিজ প্রযুক্তিতে স্বল্প খরচে রেলের অব্যবহৃত যন্ত্রাংশ দিয়ে নির্মাণ করেছে টার্ন টেবিল। এখন শুধু রেললাইন সংযোগের অপেক্ষা। চালু হলে দেশের মধ্যে এটিই হবে প্রথম নির্মিত টার্ন টেবিল।লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় স্টেশন থেকে প্রতিদিন ১১টি ট্রেন ঢাকা, টাঙ্গাইল, গাইবান্ধা, বোনারপাড়া, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুরসহ ২৮টি রেলস্টেশনে চলাচল করছে। এটি চালু হলে ইঞ্জিন সোজাভাবে চলবে। এতে চালকদের সুবিধার পাশাপাশি চাকার ক্ষয়রোধ হবে। ট্রেনচালক জহুরুল ইসলাম বলেন, ইঞ্জিন ঘোরানোর ব্যবস্থা না থাকায় উল্টোভাবেই ট্রেন চালাতে হয়। এতে অনেক সময় বাঁকা রেললাইনে সিগন্যাল চোখে পড়ে না। ইঞ্জিন ঘুরিয়ে সামনের দিকে চালক থাকলে তা চালাতে সুবিধা হয়। এ টার্ন টেবিল নির্মাণের ফলে এ সমস্যার সমাধান হবে।
টার্ন টেবিল তৈরির উদ্যোক্তা লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের যন্ত্র প্রকৌশলী (ক্যারেজ অ্যান্ড ওয়াগন) তাসরুজ্জামান বাবু বলেন, এই প্রথম দেশীয় যন্ত্রাংশ দিয়ে টার্ন টেবিলটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ইঞ্জিন ও কোচ সহজেই ঘোরানো যাবে। স্বল্প ব্যয়ে আর উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ টার্ন টেবিলটি নির্মাণ করা হয়েছে। এতে যেমন চাকার ক্ষয়রোধ হবে, তেমনি চালককে আর পেছনে বসে ট্রেন চালাতে হবে না। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁঁকি কমে যাবে। রেল ভ্রমণ হবে আরও গতিশীল ও নিরাপদ।