একসময়ের খরস্রোতা সিংহ নদ এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও দূষণে অস্তিত্ব সংকটে কেরানীগঞ্জের এ নদটি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সিংহ নদ ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন ও মার্কেট। কথিত আছে, একসময় এ নদে স্রোতের গর্জন ছিল সিংহের মতো। এ কারণেই এর নাম রাখা হয় সিংহ নদ। তবে দূষণ আর দখলে একেবারে মৃত খালে পরিণত হয়েছে নদটি। এখন দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে নদ ছিল। ৫০ বছর ধরে এ নদের তীর দখল করে নানা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ চলছে।
নদটি কোন্ডা এলাকায় ধলেশ্বরী থেকে উৎপত্তি হয়ে তেঘরিয়া, বাস্তা, শাক্তা, রুহিতপুর হয়ে খাড়াকান্দিতে পুনরায় ধলেশ্বরীর সঙ্গে মিশেছে। এ নদের একটি শাখা রামেরকান্দা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে মিশেছে। কলাতিয়া, আকসাইল, বেলনা, রামেরকান্দা ও রুহিতপুরে নদের একটি বড় অংশ দখল করে নিয়েছেন প্রভাবশালীরা। এসব জায়গায় পানি প্রবাহ বন্ধের উপক্রম হয়ে গেছে। বয়ঃবৃদ্ধরা জানান, একসময় লোকজন এ নদ হয়ে বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী নদীতে যাতায়াত করত। ব্যবসায়ীরা এ নদ হয়ে বিক্রমপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল, খুলনায় যেত। এই খরস্রোতা নদ দিয়ে শত শত মণ ধান-পাটবোঝাই নৌকা পাল তুলে যাতায়াত করত।কদমপুর গ্রামের আশি ঊর্ধ্ব বরকত আলী জানান, সিংহ নদের গর্জনে ঘুম ভাঙত এর পাড়ের মানুষের। অন্য সব নদীর তুলনায় প্রশস্ত কম হলেও এ নদ ছিল খরস্রোতা। এ নদ ঘিরেই ছিল এলাকার বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবন-জীবিকা। মাছ ধরা থেকে শুরু করে জমিতে সেচ ও দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করা হতো এ নদের পানি। কিন্তু এসব এখন ইতিহাস। এ ছাড়াও বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী ও কালীগঙ্গা নদীবেষ্টিত কেরানীগঞ্জ উপজেলার বুক চিরে বইত প্রায় ৫২টি খাল। অবৈধ দখল ও দূষণে অস্তিত্ব সংকটে এসব খাল। খালগুলো এখন বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। নদের পাড়ের বাসিন্দা হোসেন আলী বলেন, নদের তীরে প্রতিদিন ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। একটি মহল নদ ভরাট করছে। এসব ময়লা-আবর্জনার গন্ধে আর মশা-মাছিতে আমরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। নদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। শুভাঢ্যার বাসিন্দা আজিজুল ইসলাম বলেন, নদ ও খালগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় উপজেলার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই জমে যায় হাঁটুপানি। শুধু কি তাই, উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়কে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবু রিয়াদ বলেন, অতি শিগগিরই সিংহ নদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও এর জায়গা উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিংহ নদ যাতে তার আগের রূপ ফিরে পায়। ইতোমধ্যে খালগুলো খননের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। খালের আশপাশে সব অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হবে।