রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
সমীক্ষায় তথ্য

খরায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি

তাপপ্রবাহে চুয়াডাঙ্গায় জীবন-জীবিকায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি। কৃষি খাতে ক্ষতি হতে পারে ৩৬৩ কোটি টাকার

জামান আখতার, চুয়াডাঙ্গা

খরায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি

তীব্র দাবদাহ ও খরায় চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃষি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বাড়তি খরচ, উৎপাদন ঘাটতিসহ চাষাবাদ উপযোগী পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় কয়েক বছর ধরেই ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, চলতি বছর এপ্রিল মাসের শুরু থেকে একটানা ৩৭ দিন তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায়। মার্চ মাসেও অন্তত ১১ দিন তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর রেকর্ড হয়। এ অবস্থা চলছে কয়েক বছর ধরে। এর নেতিবাচক প্রভাব দেখাও দিয়েছে জেলাজুড়ে। কৃষকরা বলছেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে খরায় চুয়াডাঙ্গা জেলার পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এতে ভুগর্ভস্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। চাষাবাদে বাড়তি খরচ যোগ হচ্ছে। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে ধান ও সবজি চাষে বাড়তি খরচের পাশাপাশি ফলন বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে। যা কৃষকদের দুর্ভোগে ফেলে দিচ্ছে। দামুড়হুদার কৃষক আবদুল মান্নান বলেন, এ বছর তিনি সাত বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেন। বৈরী আবহাওয়ার কারণে সেচ ও ওষুধ কিনতে বিঘাপ্রতি বাড়তি বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে। অন্যদিকে ধানের ফলন কমেছে বিঘায় অন্তত সাত মণ। তীব্র তাপে ধানে চিটা হওয়ায় এটা হয়েছে। একই রকম অবস্থার বর্ণনা দেন চাষি এনামুল জোয়ার্দ্দার ও বাবু বিশ্বাস। সদর উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামের কৃষক লিটন হোসেন ও নাসির বিশ্বাস বলেন, এপ্রিল-মে মাসের তাপে তাদের গ্রীষ্মকালীন সবজি ও আমের ফলন কমে গেছে। পাটের খেতেও একই অবস্থা। কয়েকদিন পর পাট জাগ দিতে হবে। মাঠে-ঘাটে কোথাও পানি নেই। এ নিয়ে দুশ্চিয়ায় এখন থেকেই তাদের দিন কাটছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার এক সমীক্ষায়ও উঠে এসেছে একই ধরনের চিত্র। তাদের মতে, চলতি বছর চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃষক ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সমীক্ষায় বলা হয়েছে, চুয়াডাঙ্গা জেলায় কৃষি খাতে অন্তত ৩৬৩ কোটি টাকার ক্ষতি হতে পারে। এ ছাড়া তাপপ্রবাহের ফলে এ জেলায় জীবন-জীবিকায় অন্তত ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, তাপপ্রবাহে ফলনে কোনো প্রভাব পড়েনি। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, তাপপ্রবাহের কারণে চুয়াডাঙ্গার কৃষিতে বাড়তি সেচ খরচ লাগলেও উৎপাদন ঘাটতির আশঙ্কা করছেন না তারা। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, এ বছর জেলায় ৩৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ২৯ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যার বিপরীতে ৩৫ হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৭৫২ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয়েছে। ৪৯ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৪০ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যার বিপরীতে ৪৯ হাজার ৬৬৫ হেক্টর জমিতে ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৩৫৫ মেট্রিক টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসাবে সবজি চাষেও জেলার কৃষকরা অনেকাংশে সফল। কৃষক নেতা রবিউল হক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে চুয়াডাঙ্গা ও আশপাশের জেলাগুলোতে গ্রীষ্ম মৌসুমের চাষাবাদ ঝুঁকির মুখে পড়বে।

সর্বশেষ খবর