বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

সারা বছরের খাবার জুটছে কুমড়ায়

চরের হাজারো কৃষকের ভাগ্যবদল

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

তিস্তার বালুচরে কালো সোনা-খ্যাত মিষ্টিকুমড়া চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে বন্যা, খরা আর ভাঙনের শিকার হাজারো কৃষকের। বালুচরে ফলানো এ সবজি বিক্রি করে জুটছে কৃষকের সারা বছরের খাবার। কুমড়া রংপুর অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, এমনকি বিদেশেও।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ জেলার তিস্তা-ধরলাসহ ১৩টি নদীর ২ শতাধিক চরের ৪৭০ হেক্টর জমিতে এবার মিষ্টিকুমড়ার চাষ হয়েছে। কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় কৃষকের মুখেও ফুটেছে হাসি। দাম বেশি পাওয়ায় অনেক আনন্দ কৃষকের। তারা বলছেন, এবারে যে লাভ হচ্ছে তাতে সারা বছরের খাবার জুটবে। বেশ কয়েকজন কৃষক এ প্রতিবেদককে বলেন, বালুচরে যখন ফসল ফলিয়ে ভালো দাম পাই, তখন আর কষ্ট থাকে না। ধরলার চর খাটামারির কৃষক ইদ্রিস আলী জানান, চরের ৫ বিঘা জমির মিষ্টিকুমড়া থেকে লাভ হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। আমার ফলানো কুমড়া বিদেশে যাচ্ছে- তাতেই আমি খুশি। কৃষক ওমর আলী জানান, তার নিজের কোনো জমি নেই। তিস্তা নদীর বুকে জেগে ওঠা বালুচরে ১ হাজার মিষ্টিকুমড়ার চারা লাগিয়েছিলেন। মাত্র ২০ হাজার টাকা খরচে এ খেত থেকে ৯০ হাজার টাকার মিষ্টিকুমড়া বিক্রি করেছেন। চর গোবর্ধনের কৃষক হারুন মিয়া বলেন, নদীতে সব জমি ভেঙে গেছে। চরের জমিতে গর্ত খুঁড়ে ৫০০ মিষ্টিকুমড়ার চারা লাগিয়েছিলাম। লাভও হয়েছে ভালো। চাষি ছকমল মিয়া বলেন, বালুতে গাছের চারাগুলো বেড়ে ওঠে। কোনো মাচাং দিতে হয় না। এজন্য খরচ কম। উৎপাদনও ভালো হয়েছে। কম খরচে অধিক লাভ করতে চরাঞ্চলের জমিতে মিষ্টিকুমড়া চাষের বিকল্প নেই। সরকার প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা প্রণোদনা দেয়। কিন্তু চরের চাষিরা তা পান না। এ সুযোগ পেলে ব্যাপকহারে চাষাবাদ করা যেত এক সময়ের পরিত্যক্ত এসব বালুচরে। যদি আগাম বন্যা না আসে তাহলে ৭০-৮০ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রির আশা এ কৃষকের।

তিস্তা চরের চাষি মজিবর জানান, ৩ বিঘা জমির কুমড়া বিক্রি করেছি, লাভ হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা। এ টাকা দিয়েই আমার সারা বছর সংসার চলবে, ছেলেমেয়েদেরও লেখাপড়ার খরচ উঠবে।

জানা গেছে, বর্ষাকালে তিস্তা নদীতে তীব্র স্রোত থাকলেও হেমন্তেই তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াযান নদীর বুকে জেগে ওঠে অসংখ্য বালুচর। বর্ষায় নদীর দুই কূল উপচিয়ে বন্যায় প্লাবিত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। একই সঙ্গে ভাঙনের মুখে পড়ে বিলীন হয় ফসলি জমি-বসতভিটাসহ স্থাপনা। বর্ষার বিদায় বেলায় ধু-ধু বালুচরে পরিণত হয় এসব নদী। তিস্তা আর ধরলা নদীবেষ্টিত জেলা লালমনিরহাটে রয়েছে ৩ শতাধিক চর। বন্যা আর ভাঙনের সম্পদহারা চরাঞ্চলের মানুষ জীবনজীবিকার তাগিদে জেগে ওঠা বালুচরেই ফসল বুনেন। ধু-ধু বালুতে ফসল ফলানো বেশ কষ্টসাধ্য। পেটে দুমুঠো ভাত জোগাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে বালুচরে ফসলের চাষাবাদ করেন নদীপাড়ের মানুষ। তবে চরাঞ্চলের জমিতে খিরা, তরমুজ, বাদাম চাষ হলেও মিষ্টিকুমড়ার কদর বেশি। চরাঞ্চলের বালুতে মিষ্টিকুমড়ার চাষাবাদে খরচ কম এবং ফলন বেশি হওয়ায় এ ফসলে বেশি আগ্রহ চাষিদের। চাষিরা জানান, বালুচরে গর্ত করে বালু সরিয়ে সেই গর্তে অন্য স্থান থেকে আনা পলিমাটি দিয়ে পূরণ করে দেওয়া হয়। প্রতিটি গর্তে জৈবসার দিয়ে মিশ্রণ করে ৩-৪টি করে মিষ্টিকুমড়ার বীজ বপন করতে হয়। কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক সাইখুল আরিফিন বলেন, চরের এসব কৃষককে প্রণোদনার আওতায় আনলে তারা আরও স্বাবলম্বী হবেন। আমরা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। আশা করছি খুব শিগগিরই সরকার এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবে।

সর্বশেষ খবর