শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

মূলধন সংকটে চামড়া ব্যবসায়ীরা

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

মূলধন সংকটে চামড়া ব্যবসায়ীরা

ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া পড়ে থাকায় আসন্ন কোরবানির চামড়া কেনা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জয়পুরহাটের চামড়া ব্যবসায়ীরা। তাদের আশঙ্কা, চামড়া কিনতে না পারলে সেগুলো চোরাকারবারির হাতে চলে যাবে। দেশের কোটি কোটি টাকার চামড়া পাচার হয়ে যাবে অন্য দেশে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর কোরবানির ঈদে জয়পুরহাটের আড়তগুলো থেকে প্রায় ৭০ কোটি টাকার পশুর চামড়া ঢাকায় সরবরাহ করা হয়। তবে এ বছর জেলার চামড়ার আড়তগুলোতে নেই প্রস্তুতি। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানান, বাজার ধসে এমনিতেই লোকসান, তার ওপর ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। তাদের বাকি দিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন অনেক চামড়া ব্যবসায়ী। জানা গেছে, জয়পুরহাট শহরের আরাফাতনগর, আমতলী, পাঁচবিবি উপজেলার রেলগেট, আক্কেলপুর উপজেলার হাজিপাড়া এলাকায় চামড়ার আড়তগুলোতে প্রতি বছরের মতো এবার নেই প্রস্তুতি। এসব আড়তের চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, ট্যানারি মালিকরা গত কয়েক বছরের কোটি কোটি পাওনা টাকা এখনো পরিশোধ করতে পারেননি। এ ছাড়া প্রতি বছর ট্যানারি মালিকদের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দামে চামড়া কেনায় বিপাকে পড়তে হয় তাদের। সীমান্ত জেলা হওয়ায় চামড়া পাচারের আশঙ্কাও থাকে এখানে। সেই সঙ্গে চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে প্রধান কাঁচামাল লবণের দাম এবং শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় সব মিলিয়ে ব্যবসায়ীরা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই বকেয়া টাকা পরিশোধে ট্যানারি মালিকরা যেন উদ্যোগ নেন, সেই সঙ্গে ব্যাংকগুলোও যেন সহজ শর্তে ঋণ দেয়, এ বিষয়ে সরকারকে সুদৃষ্টিও কামনা করেন তারা। জয়পুরহাটের চামড়া ব্যবসায়ী গোলজার হোসেন জানান, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে তারা আড়তগুলো প্রস্তুত রেখেছেন। তবে ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা টাকা না পাওয়ায় তারা বিপাকে রয়েছেন চামড়া কেনা নিয়ে। এদিকে আগের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় নতুন করে ঋণ দিচ্ছে না ব্যাংকগুলো। ফলে আসন্ন ঈদে নতুন করে চামড়া কেনা মুশকিল হয়ে পড়বে বলে জানান এ ব্যবসায়ী। তিনি অভিযোগ করেন, ট্যানারি মালিকরা সব সময় সিন্ডিকেট করে চামড়া কেনেন এবং দাম পরিশোধের বেলাতেও অল্প করে টাকা দেন, যা দিয়ে ব্যবসা চালানো যায় না। পাঁচবিবি উপজেলার চামড়া ব্যবসায়ী অহেদুল হোসেন ছোটন বলেন, চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পাচাররোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এ শিল্প লাভের মুখ দেখবে। কোরবানির আগে পুঁজি সরবরাহ করে চামড়াশিল্পকে সচল রাখবেন ট্যানারি মালিকরা এমন আশা ব্যক্ত করে জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সভাপতি শামিম আহমেদ জানান, দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি চামড়াশিল্পের প্রসারে কাঁচামাল লবণের দাম স্থিতিশীল রাখাসহ চামড়া পাচাররোধ ও বকেয়া টাকা পরিশোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে এ শিল্প টিকে থাকবে। জয়পুরহাট-২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. নাহিদ নেওয়াজ জানান, চামড়া পাচাররোধে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চোরাকারবারিরা সীমান্ত এলাকার যেসব স্থান পাচারের পথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে, সেই জায়গাগুলো সব সময় নজরদারির মধ্যে রাখা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর