শনিবার, ১৫ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

অসাধু চক্র পথে-হাটে-ঘাটে

♦ ফেরিঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া, পশুর হাটে অতিরিক্ত টোল আদায় ♦ বিপাকে যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক, ক্রেতা-বিক্রেতা

প্রতিদিন ডেস্ক

পাবনার কাজীরহাট ফেরিঘাটে অতিরিক্ত ভাড়া ও ঠাকুরগাঁওয়ে গবাদি পশুর হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। এ ছাড়া রায়পুর-ফরিদগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর ও সড়কের দুই পাশে অসাধু চক্র দোকানপাট গড়ে তুলেছে। এতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সাধারণ যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক, ক্রেতা-বিক্রেতাদের। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

পাবনা : পাবনার কাজীরহাট-আরিচা নৌরুটে ফেরিতে গরুবাহী ট্রাকসহ সব ধরনের পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় এবং নানা অব্যবস্থাপনার অভিযোগ উঠেছে। ঘাটের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা এ কাজ করছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। একটি গণশৌচাগার থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। এতে চরম বিপাকে পড়তে হয় দূরদূরান্ত থেকে আসা যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের। সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকার সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ রুট কাজীরহাট-আরিচা ঘাট। তীব্র যানজট, সময় ও অতিরিক্ত অর্থ বাঁচাতে প্রতিদিন এ ঘাট দিয়ে শত শত গাড়ি পারাপার হয়। এ সুযোগে পরিবহন ও সাধারণ যাত্রীদের জিম্মি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। ফলে চালকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। বিআইডব্লিউটিসির নিয়ম অনুযায়ী বড় ট্রাকের ভাড়া ২৬৫০ টাকা, নেওয়া হচ্ছে ৩,২০০ থেকে ৩,৫০০। নরমাল ট্রাক ২,০৪০ টাকার স্থলে ২,৭০০, মিনি ট্রাক ১,৫৫০ টাকার স্থলে ২,২০০। অভিযোগ রয়েছে, নির্ধারিত ভাড়া স্লিপে লেখা থাকলেও টিকিট কাউন্টারে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। বিষয়টি স্বীকারও করেন নগরবাড়ী-কাজীরহাট পোর্ট কর্মকর্তা আবদুল ওয়কিল। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা মৌখিকভাবে শুনেছি, তবে কেউ লিখিত অভিযোগ না দেওয়ায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না।’ তবে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন কাজীরহাট বিআইডব্লিউটিসির ব্যবস্থাপক মো. ফয়সাল। টিকিটে অতিরিক্ত টাকার তথ্য উল্লেখ থাকে না কেন-জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। পাবনার বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ‘অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সুযোগ নেই। বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখব। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’  ঠাকুরগাঁও : জেলার গবাদি পশুর হাটগুলোয় অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। টোল ও চাঁদার নামে প্রতি হাটে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ইজারাদাররা। এতে বাড়তি চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে ক্রেতাদের। ক্রেতাদের অভিযোগ, অবৈধভাবে অতিরিক্ত টোল দিয়ে গরু লেখাতে বাধ্য করছেন ইজারাদাররা। সরেজমিনে দেখা যায়, কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ক্রেতা-বিক্রেতাদের ব্যস্ততার সুযোগে গবাদি পশুর হাটগুলোয় অবৈধভাবে অতিরিক্ত হাসিল (কর) আদায় করছেন ইজারাদাররা। একদিন ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হলে তা বন্ধ হয়, পরের হাটে আবারও হাতিয়ে নেওয়া হয় অতিরিক্ত টোল। জানা যায়, ৪ জুন হরিপুর উপজেলার যাদুরানি পশুর হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের দায়ে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ৮ জুন রাণীশংকৈলের কাতিহারহাটে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে গরুর হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগে মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক নামে ইজারাদারের এক কর্মচারীকে সাত দিনের কারাদন্ড দেওয়া হয়। ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ইজারাদারদের অতিরিক্ত টোল আদায়ের প্রবণতা রয়েছে। হাটগুলোয় জরিমানা করা হচ্ছে। অবৈধভাবে টোল নিলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) : লক্ষ্মীপুরের রায়পুর-ফরিদগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর ও সড়কের দুই পাশে অবৈধ দুই শতাধিক দোকানপাট গড়ে তুলেছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী। ফুটপাত দখল করে দোকানপাট বসানোয় চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পৌরবাসীসহ সাধারণ মানুষকে। এ কারণে মূল রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে পথচারীরা। সড়কে প্রতিদিন যানজটও সৃষ্টি হচ্ছে।

রায়পুর থানার ওসি ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, সড়কের উভয় পাশে গড়ে ওঠা সব দোকানই অবৈধ। এগুলো শুধু পুলিশের পক্ষে উচ্ছেদ করা সম্ভব নয়। থানা পুলিশ বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ করেছে। তবে সকালে উচ্ছেদ করলে বিকালে ফের দখল হয়ে যায়। আমি নিজেও কয়েকবার চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনো সুফল পাইনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, রায়পুর-হায়দরগঞ্জ সড়ক, রায়পুর-মধ্যবাজার সড়ক ও রায়পুর-ফরিদগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের বাস টার্মিনাল থেকে শুরু করে পৌরসভা কার্যালয়ের সড়কের ওপর ও দুই পাশে কাঁচা বাজার, মাছ বাজার, ফলের দোকানসহ বিভিন্ন প্রকার স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকানসহ অবৈধ দোকানপাট বসিয়ে ব্যবসায়ীরা গভীর রাত পর্যন্ত ব্যবসা করছে। প্রায় সব ব্যবসায়ী সড়কের ওপর রাখছে বিভিন্ন ঝুড়ি, ফুলের ডালা, মাছের পসরা ও ভ্যানসহ মৌসুমি ফল। দুই পাশে দোকানপাট ভাড়া দিয়ে সংশ্লিষ্টরা প্রতিদিন অবৈধভাবে টোল আদায় করছে। ব্যস্ত এসব সড়কে ক্রেতা-বিক্রেতারা দাঁড়িয়ে ক্রয়-বিক্রয় করছে বিভিন্ন পণ্য। পথচারীরা নিরাপদে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারে না। বিপজ্জনক হওয়া সত্ত্বেও এসব দোকানের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফল ব্যবসায়ী বলেন, আমরা পৌর শহরের লাইনম্যান নাছির নামের এক ব্যক্তিকে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে এ সড়কে ব্যবসা করছি।

ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম মুরাদ বলেন, আঞ্চলিক এ মহাসড়কে অবৈধ দখল চলছে। বাস চলাচল না করলে বোঝার উপায় থাকে না যে, এটা মহাসড়ক। প্রতি বছর বছর পৌরসভার টেন্ডারের মাধ্যমে প্রভাবশালীরা ইজারা নিয়ে লোকদের দিয়ে চাঁদা তুলছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান খান বলেন, ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে স্থায়ীভাবে সব উচ্ছেদ করা হবে। তবে দ্রুত উচ্ছেদ হবে বলে জানান তিনি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর