রবিবার, ১৬ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

খুঁড়িয়ে চলছে জুট মিল

অকশনের নামে মিলের কোটি কোটি টাকার মালামাল লুটের অভিযোগ

আবদুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

খুঁড়িয়ে চলছে জুট মিল

অকশনের নামে সিরাজগঞ্জে জাতীয় জুট মিলের কোটি কোটি টাকার মালামাল লুটের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, লিজ গ্রহণকারী রশিদ গ্রুপ মিলটি আলেয়া জুট মিল নামে চালুর পর থেকে বিজেএমসির কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে মেশিনের নতুন যন্ত্রপাতি খুলে নিয়ে তা অকেজো দেখিয়ে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে। পাট, তেল ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদির অভাবে মাঝেমধ্যে মিল বন্ধ থাকে। যন্ত্রাংশের অভাবে অনেক মেশিন বন্ধ। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে মিলটি।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ২০২২ সালের ২ জুলাই রাষ্ট্রীয় পাটকল জাতীয় জুট মিল শর্তসাপেক্ষে রশিদ গ্রুপকে লিজ দেওয়া হয়। অধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিতের শর্তে দুই বছর ভাড়াও মওকুফ করা হয়। দুই বছর ধরে মিলটি খুঁড়িয়ে চলছে। মিলে কখনো পাট থাকে না, কখনো তেল থাকে না। মেশিনের যন্ত্রাংশ নষ্ট হলে অকেজো দেখিয়ে তা ফেলে রাখা হয়। কখনো ২০০ শ্রমিক, কখনো ৩০০ শ্রমিক দিয়ে কাজ করা হলেও প্রতিবেদনে ১ হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করছে দেখানো হচ্ছে। মিল এলাকা অপরিষ্কার থাকায় সাপ-পোকামাকড় বিচরণ করে। শ্রমিকদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। শ্রমিকদের মাত্র ২৬০-৩০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। এতে শ্রমিকরা অর্ধাহারে জীবনযাপন করছে। শুধু তাই নয়; লিজ নেওয়ার সময় যেসব যন্ত্রপাতি চালু ছিল তার অর্ধেক এখন চালু নেই। যন্ত্রাংশগুলো খুলে খুলে অকশনের নামে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। মিলটিতে ইটলার মেশিন চালু ছিল ২টি, বর্তমানে আছে একটি। ব্যাচিং বিভাগে মেশিন চালু ছিল ব্রেকারফিনিসার, টিচার কাডসহ ৩৬টি, বর্তমানে আছে মাত্র সাতটি। বাকি মেশিনগুলো থেকে বিভিন্ন পার্টস খুলে নেওয়ায় অকেজো রয়েছে। এসব যন্ত্রাংশ নষ্ট দেখিয়ে খুলে নিয়ে অকশনে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। ড্রইং বিভাগে ছিল ৫২টি, বর্তমানে চালু রয়েছে ১২টি। স্পিনিং মেশিন চালু ছিল ৮১টি, বর্তমানে আছে ২৩টি। ওয়াইন্ডিং বিভাগে মেশিন ছিল ১৪টি। বর্তমানে রয়েছে ৮টি। তাঁত বিভাগে মেশিন ছিল ৫০০টি। বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৫০টি। ফিনিশিং বিভাগের অধিকাংশ মেশিন নষ্ট ও অকেজো।

মিল শ্রমিক মাহতাব আলী ও আলমগীর হোসেন জানান, বিজেএমসি থেকে রশিদ গ্রুপ মিলটি নেওয়ার পর প্রায় এক বছর ভালোই চলছিল। এর পর থেকে মিলে লুটপাট শুরু হয়। দেখা যায়, মেশিনের কোনো যন্ত্রাংশ নষ্ট- তা খুলে নিয়ে বাইরে স্তূপ করে রাখা হয়। নতুন কোনো যন্ত্রাংশ লাগানো হয় না। ফলে মেশিনগুলো অকোজো পড়ে রয়েছে। অর্ধেকের বেশি মেশিন অকেজো রয়েছে।

শ্রমিকরা আরও জানান, নষ্ট হওয়া মেশিনগুলো মেরামত না করে উল্টো আরও যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে গোপনে বিক্রি করা হচ্ছে। শ্রমিকরা প্রতিবাদ করলে চাকরিচ্যুতও করা হয়। শ্রমিকদের দাবি মিলটিতে একসময় হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। মিলটি ঘিরে সিরাজগঞ্জের অর্থনীতির চাকা সচল থাকত। রশিদ গ্রুপের হিসাবরক্ষক আফজাল হোসেন বলেন, আমরা লিজ নিয়ে মিল পরিচালনা করছি। মিল কীভাবে চলবে, কতজন শ্রমিক দিয়ে চালানো হবে সেটি আমাদের বিষয়। মেশিন নষ্ট হলে মেরামত করব কি করব না, সেগুলো বিক্রি করব কি করব না সেটি আমাদের বিষয়। এতে আপনাদের কিছু আসে যায় না। অল্প শ্রমিক কাজ করে বেশি দেখালে আপনাদের কী আসে যায়? আপনারা মিলের বিষয়ে কথা বলবেন না।

বিজেএমসির জাতীয় জুট মিলের ডিজিএম নুরুল হক জানান, আমরা রশিদ গ্রুপকে মিলটি লিজ দিয়েছি। লিজ দেওয়ার সময় যেসব যন্ত্রপাতি সচল দেওয়া হয়েছে, ফেরত নেওয়ার সময় সেগুলো ১০০% বুঝিয়ে নেওয়া হবে। এখন তারা যন্ত্রাংশ নষ্ট করল, নাকি খুলে বিক্রি করল তাতে এখন আমাদের কিছু আসে যায় না। আর কতজন শ্রমিক কাজ করবে, সেটি রশিদ গ্রুপের বিষয়। আমরা শুধু মিল এরিয়া প্রটেকশন দিয়ে থাকি। টেন্ডারের বেশি মালামাল মিল থেকে বের করে বিক্রি করা হচ্ছে- এমন অভিযোগে অস্বীকার করে বলেন এমনটা হওয়ার সুযোগ নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর