বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা
রাজবাড়ী

পিঁয়াজ সংরক্ষণে মডেল ঘর

♦ রয়েছে তিন স্তরের মাচা ♦ আলো বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা আছে ♦ প্রায় ৯ মাস পিঁয়াজ ভালো থাকবে

দেবাশীষ বিশ্বাস, রাজবাড়ী

পিঁয়াজ সংরক্ষণে মডেল ঘর

পিঁয়াজ চাষের জন্য রাজবাড়ী বিখ্যাত। পদ্মাপারের এ জেলায় প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে পিঁয়াজ চাষ হয়। দেশের চাহিদার ১৪ শতাংশ পিঁয়াজের সরবরাহ করেন এ জেলার কৃষকরা। তবে মৌসুমে উৎপাদন করা সব পিঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেন না কৃষকরা। সংরক্ষণের জায়গার অভাবে বাধ্য হয়ে কম দামে পিঁয়াজ বিক্রি করতে হয় কৃষকদের। অনেক পিঁয়াজ পচেও যায়। কৃষি বিভাগ বলছে, ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পিঁয়াজ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যায়। কৃষকদের পিঁয়াজ সংরক্ষণ ও ভালো দাম পাওয়াসহ মৌসুমের শেষ দিকে যেন বাজারে পিঁয়াজ সরবরাহ অব্যাহত থাকে সেই বিষয় বিবেচনা করে মসলা জাতীয় এ পণ্য সংরক্ষণে উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। কৃষি বিপণন অধিদফতর রাজবাড়ীতে পিঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য ‘মডেল ঘর’ নির্মাণ করে দিচ্ছে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে জেলার বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলায় ৫০টি মডেল ঘর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এরই মধ্যে কালুখালী উপজেলায় ২০টি ঘর নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। বালিয়াকান্দির ৩০ ঘরের মধ্যে ২০টি নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে।

জানা গেছে, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট গবেষণা করে পিঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণের জন্য এ মডেল ঘরের নকশা বানিয়েছে। কৃষকদের বাড়ির উঠানে ১ শতাংশ জমিতে টিন, বাঁশ, লোহা ও কংক্রিটের সমন্বয়ে বানানো এ ঘরে তিন স্তরের মাচা রয়েছে। ঘরের নিচে আলো বাতাস প্রবেশের জায়গা রাখা হয়েছে। পেছনে দেওয়া হয়েছে ছয়টি ফ্যান। ঝড়-বৃষ্টি থেকে পিঁয়াজ রক্ষার জন্য চারপাশে ত্রিপল রাখা হয়েছে। প্রতিটি মডেল ঘরে ৩০০ মণ পিঁয়াজ রাখা যাবে। এসব ঘরে প্রায় ৯ মাস পিঁয়াজ ভালো থাকবে। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে সাড়ে ৪ লাখ টাকা। বিনামূল্যে এসব ঘর পাচ্ছেন পিঁয়াজচাষিরা।

কৃষকরা বলেন, এ ঘরে পিঁয়াজ দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। রাজবাড়ীতে এ ঘর আরও প্রয়োজন। উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের জিয়েলগাড়ি গ্রামের কৃষক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, এক আত্মীয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করে পিঁয়াজ রাখার ‘মডেল ঘর’ পেয়েছি। এটি আমার খুব উপকারে এসেছে। তিন স্তরে আমি প্রায় ৩০০ মণ পিঁয়াজ রেখেছি। এখন পর্যন্ত পিঁয়াজে কোনো সমস্যা হয়নি। তিনি আরও বলেন, পিঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য আমরা প্রতি বছর দুশ্চিন্তায় থাকি। সেই চিন্তা থেকে মুক্তি পেয়েছি।

তবে কালুখালীর মদাপুর ও বালিয়াকান্দির চেয়ারম্যানসহ কয়েকজনের অভিযোগ, প্রকল্পের মাঠ কর্মকর্তারা প্রচার-প্রচারণা ও উপজেলা পর্যায়ে কোনো মিটিং ছাড়াই নিজেদের পছন্দমতো ব্যক্তিদের ঘর দিয়েছেন। যেখানে দুর্নীতি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও রেলপথমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিমও। তিনি বলেন, এ ঘর বিতরণে অনিয়ম হয়েছে। আমি মন্ত্রিসভায় এ অনিময় তুলে ধরব। রাজবাড়ী জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. রুবেল মোল্লাহ বলেন, এটি সরকারের ভালো একটি প্রকল্প। এ প্রকল্পে কৃষকরা দীর্ঘদিন পিঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবেন। আগামী অর্থবছরে রাজবাড়ীর পাংশায় ৫০টি পিঁয়াজ সংরক্ষণের ঘর বিনামূল্যে প্রদান করা হবে। অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রসঙ্গে এ কর্মকর্তা বলেন, আমি এ জেলায় নতুন যোগদান করেছি।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর