শনিবার, ২২ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি বেকারি পণ্য

মাদারীপুর - ব্যবহার হচ্ছে মানবশরীরের জন্য ক্ষতিকর রং, নেই বিএসটিআইয়ের অনুমোদন বাড়াচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি বেকারি পণ্য

মাদারীপুরের বিভিন্ন বেকারিতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে বিস্কুট, কেক, পাউরুটিসহ নানা ধরনের খাদ্যদ্রব্য। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে এ এলাকার সাধারণ মানুষের। সরেজমিনে ডাসার উপজেলার ধুলগ্রাম এলাকায় কয়েকটি বেকারিতে দেখা গেছে, চারদিকে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, পাতিলে কালো পোড়া তেল। শ্রমিকরা অপরিচ্ছন্ন শরীরে খালি হাতে খাদ্যদ্রব্য তৈরি করছেন। মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর কেমিক্যালের রং ও কৃত্রিম ফ্লেবার ব্যবহার করে এসব কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন বেকারি পণ্য। এসব কারখানার নেই বিএসটিআইয়ের অনুমোদন। অধিকাংশ বেকারির চিত্র একই রকম। এসব কারখানায় তৈরি খাদ্য বিক্রি হচ্ছে ডাসার ও মাদারীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন দোকানে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা জানান, নানা কারণে বেকারিতে তৈরি খাদ্যসামগ্রীর চাহিদা মোটামুটি বেশ। বেশির ভাগ শিশুর পছন্দের খাবারের তালিকায় রয়েছে বিস্কুট, কেক, পাউরুটিসহ নানা বেকারি পণ্য। সাধারণ মানুষ এ জাতীয় খাবার বাজার থেকে কিনে খায়। রিকশা-ভ্যানচালকসহ খেটে খাওয়া মানুষ এসব খাদ্য দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করে। এ ছাড়া বাসাবাড়িতে অতিথি আপ্যায়নে এসব খাবারের কদর রয়েছে। আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতেও অনেকে বেকারি পণ্য কিনে নিয়ে যান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাণিজ্যিকভাবে এসব পণ্য তৈরি ও বিপণন করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়মনীতি রয়েছে। যা পালন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু মাদারীপুরের অধিকাংশ বেকারিতে তা পালন করা হয় না। এসব কারখানায় অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে তৈরি করা হয় পণ্য। নিউ স্টার বেকারি ফ্যাক্টরির অভ্যন্তরের বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় ময়লার স্তূপ। স্যাঁতসেঁতে মেঝে। টিনের একটি ঘরে বড় আকারের চুলা বসিয়ে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরি করা হচ্ছে। অপরিচ্ছন্ন শরীরে খালি হাতে এসব পণ্য তৈরি করছেন শ্রমিকরা। পাশেই রয়েছে কেমিক্যাল রং ও ফ্লেবার গুঁড়া।

অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন হাস-মুরগির খামারে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ডিম ব্যবহার করা হয়। যেসব ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন হয় না, সেই পচা ডিম ব্যবহার করা হয় এসব কারখানায়। ডাসারের বায়েজিদ বেকারি ও নিউ স্টার বেকারিতে এমন ডিমের ব্যবহার দেখতে পাওয়া গেছে। বাচ্চা উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা ডিমে খামারিরা এর সম্ভাব্য তারিখ দিয়ে রাখে। নির্দিষ্ট তারিখে বাচ্চা উৎপাদন না হলে সেই নষ্ট ডিম বিক্রি করে দেওয়া হয় বেকারিতে। এসব ডিম আসে বগুড়া, নাটোর, রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাথুরিয়ার পাড় এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, প্রতিদিন সকালে দূরপাল্লার গাড়ির ছাদে করে প্রচুর পরিমাণ পচা ডিম আনা হয়। এসব ডিম ব্যবহার করা হয় বেকারিতে। স্থানীয় বাসিন্দা আরিফ মোল্লা বলেন, এসব বেকারিতে নষ্ট ডিম এবং ক্ষতিকর রং ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও ভিতরের পরিবেশ খুবই খারাপ।

তবে নিউ স্টার বেকারির মালিক আবদুল হালিম দাবি করেন, ‘আমরা নিয়ম মেনেই বেকারি পণ্য তৈরি করে থাকি। আমাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। বায়েজিদ বেকারির মালিকও তার কারখানার বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মাদারীপুরের উপ-পরিচালক জান্নাতুল ফেরদাউস বলেন, এসব কারখানায় শিগগিরই অভিযান চালানো হবে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নষ্ট ডিম, রং ব্যবহার করে পণ্য তৈরি করা অপরাধ।

সর্বশেষ খবর