শিরোনাম
রবিবার, ২৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

রজতরেখা মরছে দুর্বৃত্তের থাবায়

নদীখেকোদের দমন করে দ্রুত খনন প্রয়োজন

লাভলু মোল্লা, মুন্সীগঞ্জ

রজতরেখা মরছে দুর্বৃত্তের থাবায়

পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভাগাড় হয়ে গেছে রজতরেখা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রজতরেখা মুন্সীগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী এক নদী। এ নদীর উৎসমুখে আড়াআড়ি বাঁধ দিয়েছে নদীখেকোরা। ফলত প্রবাহ বন্ধ। একদা নদীটির প্রস্থ ছিল ৪৮০ ফুটের মতো। সেই নদী এখন দখলবাজদের থাবায় মরাখালে পরিণত। নদীটি কোথাও ৩০ ফুট, ৪০ ফুট বা ৫০ ফুটের মতো চওড়া। ১০ বছর ধরে নদীটির উৎমুখ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। দীঘিরপাড় বাজারের একটি অংশ এখন এ রাজতরেখা নদীর ওপর। সেখানে দোকানও তোলা হয়েছে। এসব দোকানের দক্ষিণে আড়াআড়িভাবে বাঁধ তুলে রাস্তা করা হয়েছে। এ রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা হচ্ছে পাশের এক মাদরাসায়। পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভাগাড় হয়ে গেছে রজতরেখা। এখন দীঘিরপাড় বাজারের ময়লা-আর্বজনা ফেলা হচ্ছে সেখানে। পদ্মার সঙ্গে নদীটির সংযুক্তির স্থল থেকে প্রায় ৪০০ মিটার উত্তর দিক পর্যন্ত রজতরেখা ধুঁকছে। টঙ্গীবাড়ি উপজেলার দীঘিরপাড় থেকে বেশনাল, পুরা বাজার, সদর উপজেলার শিলই, মাকহাটি, কাঁটাখালী হয়ে মুন্সীরহাট দিয়ে ধলেশ্বরীতে যুক্ত হয়েছে ১৮ কিলোমিটারের এ নদী। দুই দশক আগেও নদীটি ছিল প্রাণচঞ্চল। নদীর পূর্ব পাশে মুন্সীগঞ্জ সদর ও পশ্চিম পাশে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা। বর্ষাকালে কানায়-কানায় ভরা থেকেছে রজত রেখা। পাওয়া যেত প্রচুর মাছ। এ নদী হয়ে ছোট বড় লঞ্চে চেপে মানুষ যোগাযোগ রক্ষা করত জেলার দক্ষিণাংশের সঙ্গে। এ নদী পথে শরিয়তপুরের পাট নারায়ণগঞ্জে যেত। মালবাহী নৌকা চলাচল করত প্রতিনিয়ত। দখলের কারণে নদীটি এখন যেন ইতিহাস। রজতরেখা আলদি এলাকায় কাজলরেখার সঙ্গে মিলেছে। রজতরেখা এবং কাজলরেখা এ দুই নদীকে দুই বোন বলা হয়ে থাকে। বলা হয়, এ নদী দুটির মা পদ্মা। মাকাহাটি থেকে পশ্চিমে আলদী বাজারের পাশ ঘেঁষে যে নদীটি পশ্চিমে টঙ্গীবাড়ির দিকে চলে গেছে এটিই হচ্ছে কাজলরেখা। আর দীঘিরপাড় থেকে মোল্লাকান্দি ইউনিয়নের এবং চর কেওয়ার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ছুঁয়ে কাটাখালী এবং মুন্সীরহাট দিয়ে মিলিত হয়েছে ধলেশ্বরী নদীতে, এটি রজতরেখা। পেশীশক্তির জোরে লোভাতুর কিছু লোক রজতরেখার বিভিন্ন স্থানে ভরাট করে দখল করে নিয়েছে। ফলে জোয়ার-ভাটা বন্ধ থাকায় বৃষ্টির পানি জমে পচে যাওয়া আবর্জনা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, যে রজতরেখার টলমলে পানি দেখলে চোখ জুড়াতো সেই পানি এখন কালচে, দুর্গন্ধময়। কৃষি কাজেও এ পানি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। পরিবেশ বিজ্ঞানী আরিফুর রহমান জানান, মুন্সীগঞ্জের কাটাখালী পরে দক্ষিণে আলদী পর্যন্ত কিছুটা পানি প্রবাহ থাকলেও আলদী থেকে দীঘিরপাড় পর্যন্ত পানি প্রবাহ একবারেই ক্ষীণ। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) মুন্সিগঞ্জের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান বলেন, পদ্মার সঙ্গে সংযোগস্থলটি দখল এ বাজার স্থাপন করায় রজতরেখা দ্রুত মরে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসক আবুজাফর রিপন বলেন, জেলা কমিটির সভায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। দখলমুক্ত করতে উদ্ধার অভিযানসহ কীভাবে নদীটির জীবন ফিরিয়ে আনা যায়, সে ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর