রবিবার, ২৩ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

মিলের বিষাক্ত বর্জ্য আত্রাই নদীতে

হুমকির মুখে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য

পাবনা প্রতিনিধি

মিলের বিষাক্ত বর্জ্য আত্রাই নদীতে

পাবনার বেড়া উপজেলার খাস আমিনপুর গ্রামে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে চারটি সুতা ডায়িং অ্যান্ড প্রসেস মিল। এসব মিলে ব্যবহার করা কেমিক্যালমিশ্রিত তরল বর্জ্য পাইপের মাধ্যমে ফেলা হয় আত্রাই নদীতে। এর দুর্গন্ধ থাকে ১২ মাস। তবে বর্ষা মৌসুমে বেড়ে যায় তার ভয়াবহতা। এতে হুমকির মুখে পড়েছে কয়েকটি গ্রামের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য। স্থানীয়দের অভিযোগে জানা যায়, আত্রাই নদীর পূর্বপাড়ে চারটি প্রসেস মিল অ্যান্ড ডায়িং কারখানা গড়ে উঠেছে। ডায়িং অ্যান্ড প্রসেস মিলে সুতায় বিভিন্ন ধরনের রং করা হচ্ছে। সুতা রঙের কাজে এসিড, কস্টিক সোডা, ব্লিচিং পাউডারসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। জাতসাখিনী ইউনিয়নের খাস আমিনপুরে প্রসেস অ্যান্ড ডায়িং কারখানায় ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বা বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন করা হয়নি। মালিকরা পরিবেশ অধিদফতর ও স্থানীয় প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বছরের পর বছর সুতা প্রসেসসহ রঙের কাজ অব্যাহত রেখেছেন। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে নদীতে আসা পানির সঙ্গে এসব বর্জ্য মিশ্রণের ফলে এ এলাকাবাসীর দেহে ছড়ায় চুলকানি, ডায়রিয়াসহ নানাবিধ রোগ। নদীতে মারা যায় লাখ লাখ টাকার মাছ। কয়েকদিন ধরে আত্রাই নদীতে আসা শুরু হয়েছে বর্ষার পানি। এতে প্রসেস মিলের তরল বর্জ্য মেশায় পানির রং কালো হওয়ার পাশাপাশি তীব্র দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। বর্জ্যমিশ্রিত এই পানি নদীতে চাষ করা মাছের ঘেরে প্রবেশ করতেই মরা শুরু করে মাছ। সরেজমিন দেখা যায়, নদীর পানি বৃদ্ধি হওয়ায় সুতা প্রসেস মিলের তরল বিষাক্ত বর্জ্য জমা থাকা গর্তে মিশে পানির রং কালো হওয়ার পাশাপাশি দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। এতে নদীতে চাষ করা মাছ মরে ভেসে উঠেছে। খাস আমিনপুর গ্রামের ফিরোজ, ফরিদ, বাবু, জিয়াসহ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, এই এলাকার কয়েকটি সুতা প্রসেস মিলের তরল বিশাক্ত বর্জ্য আমাদের নদীর পানিতে মিশে গন্ধ ছড়ায়। পানি এতটাই বিষাক্ত হয়ে যায় যে, গোসল করা তো দূরের কথা, সেই পানিতে কেউ নামলেই হচ্ছে চুলকানিসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি। পানিতে কোনো প্রাণী বাঁচতে পারে না। সাপ, ব্যাঙ, মাছ মরে ভেসে উঠছে। এলাকাবাসী বিষাক্ত পানি নদীতে না ফেলতে মিলের মালিককে অনুরোধ করলেও তিনি আমাদের কথা কর্ণপাত করেন না। প্রশাসনকে জানালে তারাও কোনো ব্যবস্থা নেয় না। মাছ ব্যবসায়ী ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘আমি প্রতি বছর এখানে মাছ চাষ করি। সারা বছর মিলের বিষাক্ত বর্জ্যরে গন্ধ থাকলেও বর্ষায় তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। শুক্রবার-শনিবার দুই দিনে প্রায় ২০০ মণ বিভিন্ন ধরনের মাছ মারা গেছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ২৫ লাখ টাকা। কয়েকদিন আগে আমি মিল মালিকসহ কয়েকজনের কাছে আকুতি করে বলেছিলাম প্রসেস মিলের বর্জ্য নদীতে না দিতে। তারা আমার কথা না শুনে পরিকল্পিতভাবে মাছ মেরে ফেলেছে। এ বিষয়ে আমি আমিনপুর থানায় অভিযোগ দিয়েছি। প্রসেস মিলের মালিক কাবুল ম ল বলেন, আমি দেশের বাইরে আছি। দেশে ফিরে আপনাদের সঙ্গে কথা বলব। বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও মাহমুদুল করিম রাজু জানান, ডায়িং অ্যান্ড প্রসেস মিলের তরল বিষাক্ত বর্জ্যরে কারণে ভূগর্ভস্থ পানিতে কলিফর্ম নামক জীবাণু জন্মায়। নলকূপের এই পানি খাওয়ায় মানুষ চর্মরোগ ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া লিভার, কিডনি, ফুসফুস, হৃদযন্ত্রসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আমিনপুর থানার ওসি হারুন-উর রশীদ বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বেড়া ইউএনও মোহা. মোরশেদুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে আমিও শুনেছি। গ্রামের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

সর্বশেষ খবর