শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

কাজ শেষ না হতেই দেবে গেল সেতু

মাঝখানের চারটি সিসি পিলার দেবে গেছে, পাটাতনে সিমেন্টের স্লাবের পরিবর্তে কাঠ, দেওয়া হয়নি নিরাপত্তা রেলিং

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

কাজ শেষ না হতেই দেবে গেল সেতু

গাইবান্ধায় দেবে গেছে সেতুর মাঝখানে - বাংলাদেশ প্রতিদিন

নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই দেবে গেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকাবাজার খেয়াঘাটে তিস্তার শাখা নদীর ওপর সেতু। সোমবার রাতে সেতুর মাঝখানের চারটি সিসি পিলার দেবে যায়। এর পরও ঝুঁকি নিয়েই এর ওপর দিয়ে পারাপার হচ্ছে এলাকাবাসী। নদীর স্রোত বাড়লেই সেতুটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ছাড়া সেতুর পাটাতনে সিমেন্টের স্লাবের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে কাঠ। এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি নিরাপত্তা রেলিং। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণেই এ অবস্থা হয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকাঘাটে লোকজন নৌকায় নদী পারাপার হতো। দুই পাশের ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেলকাঘাট এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ করে এলজিইডি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অর্থায়নের ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় এটি বাস্তবায়ন করে। উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানান, সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০২২ সালের আগস্টে। ২০২৩ সালের মেতে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০০ মিটার দীর্ঘ, ৬ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৩০ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে এ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ কাজের দায়িত্ব পায় গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ছানা এন্টারপ্রাইজ নামে এক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এ পর্যন্ত সেতুর নির্মাণকাজের প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সিসি পিলারের ওপর দুই পাশে ঢালাই দেওয়া হয়েছে। তবে সেতুর পাটাতনে সিমেন্টের স্লাবের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে কাঠ। কংক্রিটের খুঁটির ওপর কাঠের পাটাতন বসানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি নিরাপত্তা রেলিং। প্রতিটি পিলারের উচ্চতা দেওয়া আছে প্রায় ৪ ফুট। এ অবস্থায় সেতু দিয়ে শিক্ষার্থীসহ প্রতিদিন স্থানীয় লোকজন যাতায়াত করছে। পথচারীসহ সাইকেল, রিকশাও পারাপার হয়। এর নির্মাণকাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা স্থানীয় ঠিকাদার সাগীর খান বলেন, ‘এ প্রকল্পের মূল ঠিকাদার গাইবান্ধার ছানা এন্টারপ্রাইজ। সাব-ঠিকাদার হিসেবে তিনি এ কাজটি করছেন।’ তিনি বলেন, ‘কাজ শেষ না হতেই বন্যা শুরু হয়। তিস্তা নদীতে খরস্রোতের কারণে নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে খুঁটি দেবে যায়। স্টিমেট-প্ল্যান মোতাবেক কাজ করা হয়েছে। এ মুহূর্তে অনেক পানি, তাই কিছু করার নেই। ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, ‘সেতুটির নির্মাণ সম্পন্ন হলে স্থানীয়দের দুর্ভোগ কমবে। তবে সেতুটি দেবে যাওয়ায় স্থানীয়দের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেল। এ নিয়ে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। তবু কোনো কাজ হয়নি।’

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল মান্নাফ বলেন, ‘সেতু দেবে যাওয়ার কথা শুনেছি। তবে এটা আমার যোগদানের আগের ঘটনা। এ বিষয়ে তেমন কিছু জানি না।’ তিনি বলেন, ‘পিলার দেবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হবে।’ সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘লোকমুখে শুনেছি। খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর