শিরোনাম
রবিবার, ৩০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আশুড়ার বিল

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আশুড়ার বিল

বর্ষায় নতুন রূপে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঐতিহাসিক আশুড়ার বিল ও অপরূপ মুগ্ধকর শালবনকে এক সুতোয় গেঁথেছে আঁকাবাঁকা দৃষ্টিনন্দন কাঠের সেতু। কাঠের সেতুতে দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঈদের পর থেকে ভিড় জমিয়েছে অগুনতি দর্শনার্থী-পর্যটক। এখন দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষণীয়। আশুড়ার বিলে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বিলের দুই ধারে প্রাকৃতিক শালবনে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। কাঠের সেতুতে দাঁড়িয়ে বিল আর দুই পাশের বনের দৃশ্য দেখতে কাছে টানে ভ্রমণপিপাসুদের। এই দৃশ্য দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে তারা। তবে বিলে সারা বছরই দর্শনার্থীদের প্রিয় স্থান হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বিশাল আয়তনের বিলটির সৌন্দর্য রক্ষার্থে এবং সারা বছর পানি ধারণের জন্য ক্রস ড্যাম নির্মাণ করা হয়েছে। দুই শালবনের মাঝ দিয়ে আশুড়ার বিল। দর্শনার্থী সানাউল্লাহ, মতিউর রহমান, ইয়ামেন সরকারসহ কয়েকজন জানান, দুই শালবনের মাঝে এই দৃষ্টিনন্দন সেতু সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশে নিজেকে অন্যরকম মনে হয়। সন্ধ্যার পর আলোকবাতি বাড়তি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। নৌকায় ভ্রমণের দুই পাশের দৃশ্যকে মুগ্ধ করে। বিশাল ওই বিলের গভীরতা ও কাদার তলানি এবং চারপাশ বেষ্টিত শালবন দর্শনার্থীদের মন ভরিয়ে দেয়। এক সময় নানা কিংবদন্তির জন্ম দেয়।

আর দুই বনকে সংযুক্ত করতে বিলের মুনির থান ঘাট থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ভ্রমণপিপাসুদের সুবিধার্থে শালকাঠ দিয়ে উত্তরবঙ্গের বৃহৎ ৯০০ মিটার জেড আকৃতির দৃষ্টিনন্দন আঁকাবাঁকা কাঠের সেতু নির্মাণ এবং নামকরণ করা হয় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব কাঠের সেতু। বিলের পানি, মুক্ত বাতাস, চারপাশে সবুজ ঘন অরণ্য, পাখিদের কিচিরমিচির ডাকাডাকি এসব মনোমুগ্ধকর দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমীদের অন্তরে অন্যরকম শিহরণ জাগিয়ে তোলে। রাতে আশুড়ার বিলের ওপর দৃষ্টিনন্দন শেখ ফজিলাতুন নেছা কাঠের সেতুতে আলোকবাতি, বনের পাশে পাশে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রয়েছে। দর্শনার্থী সানাউল্লাহ, মতিউর রহমান, ইয়ামেন সরকারসহ কয়েকজন জানান, দুই শালবনের মাঝে এই দৃষ্টিনন্দন সেতু সবুজ প্রাকৃতিক পরিবেশে নিজেকে অন্যরকম মনে হয়। সন্ধ্যার পর আলোকবাতি বাড়তি সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। নৌকায় ভ্রমণের দুই পাশের দৃশ্যকে মুগ্ধ করে। তবে বিলটিতে পানি ধরে রাখতে এবং আরও নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিমে প্রায় দেড় কি.মি. দূরে জাতীয় উদ্যানের শালবন ঘেঁষে এ বিলের অবস্থান। আশুড়ার বিলের নবাবগঞ্জ ও বিরামপুরের এলাকা নিয়ে আয়তন ৩১৯ হেক্টর। এর মধ্যে নবাবগঞ্জে ২৫১ হেক্টর অবস্থিত। এই বনে শাল ছাড়াও সেগুন, গামারি, কড়ই, বেত, বাঁশ, জামসহ প্রায় ২০ থেকে ৩০ প্রজাতির গাছগাছড়া রয়েছে। এখনো বিলটিতে অনেক হারিয়ে যাওয়া প্রজাতির মাছ জেলেদের হাতে ধরা পড়ে। উত্তরবঙ্গের বৃহৎ এ বিলটি লম্বায় ৫ কিলোমিটার।

এদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা এই আশুড়ার বিল নিয়ে রয়েছে নানান পৌরাণিক কাহিনি। অতি প্রাচীনকালে দেবতা ও অসুরদের মধ্যে লড়াই চলছিল আধিপত্য বিস্তার নিয়ে। সেখানে দেবতাদের কাছে অসুরেরা পরাজিত হয়েছিল। দেবতাদের খঞ্জরের আঘাতে অসুরদের ঝরা রক্ত তাদেরই পায়ে দেবে যাওয়া গর্তে ভরে গিয়েছিল বলে অসুরের বা আশুড়ার বিল নামকরণ করা হয়। অনেকে বলেন, ওই বিলের চারপাশ থেকে ৮০টি দ্বার বা নালা চতুর্দিকে ছড়িয়ে গেছে বলে আশি নালা নামের উৎপত্তি হয়েছে। বিলের মাঝে কতিপয় স্থানের চমৎকার নাম আছে যেমন- পাতিলদহ, বুড়িদহ, কাজলাদহ, পীরদহ, মুনির আইল ও মুনির থান ইত্যাদি। বিশাল ওই বিলের গভীরতা ও কাদার তলানি এবং চারপাশ বেষ্টিত শালবন এক সময় নানা কিংবদন্তির জন্ম দেয়।

 

 

সর্বশেষ খবর