জেলার বিভিন্ন স্থানে দিনে-দুপুরে অবাধে তৈরি, বিক্রয় এবং বিপণন হচ্ছে মিহি ও হালকা চায়না দুয়ারী জাল। গ্রামাঞ্চলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাছ ধরার উপকরণ প্রস্তুতকারক ও বিক্রয় প্রতিষ্ঠান করার নামে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে নির্বিঘ্নে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালের চেয়েও ক্ষতিকর এ জাল তৈরি করছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি। এতে ছোট পোনা মাছ ও জলজ জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের আশঙ্কা করছে সচেতন মহল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার শতাধিক স্থানে, বিশেষ করে পাবনা শহরের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে, সুজানগরের কাশিনাথপুরের আশপাশে, বেড়া উপজেলা সদরে, ফরিদপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চায়না দুয়ারী জাল উৎপাদন করা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন এটি কুটিরশিল্পের দোহাই দিয়ে অভিযান পরিচালনায় ঢিলেমি ভাব দেখাচ্ছে। বোঁথর গ্রামের একটি বাড়ির পাশে অবস্থিত চায়না দুয়ারী জালের কারখানায় দেখা যায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এ জাল তৈরির বিভিন্ন উপকরণ। এলাকাবাসী জানান, বেশ কিছুদিন ধরে এ বাড়িতে তৈরি হচ্ছে চায়না দুয়ারী জাল। বাইরের কাউকে এ বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয় না। নারী-পুরুষ কারিগররা আসে যায়। কর্মচারীরা জানান, কিছুদিন ধরে এখানে এ জাল তৈরি হচ্ছে। তাদের ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে বলেও জানান তারা। কারখানা মালিকের এক নিকটাত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অল্প কিছুদিন হলো চালু করেছি। প্রশাসন জানে না। গোপনে চালানো হচ্ছে। অন্য জালের চেয়ে কম পরিশ্রমে চায়না দুয়ারী জালে অধিক পরিমাণ মাছ পাওয়া যায় বলে এ এলাকার জেলেদের কাছে এর কদর বেড়েছে। জেলেরা এখন মাছ ধরতে কারেন্ট জালের পরিবর্তে ঝুঁকছেন চায়না দুয়ারী জালের দিকে। উৎপাদন, বিক্রয়, বিপণন, ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও সুজানগর, আটঘরিয়া, চাটমোহরের বিল, নদীগুলোতে প্রতিদিন হাজার হাজার জাল পেতে মা ও পোনা মাছ নিধন করছেন অসাধু মৎস্যজীবীরা। ফলে ক্রমশই বিলুপ্ত হচ্ছে দেশি প্রজাতির মাছ। এ জালের ব্যবহার অব্যাহত থাকলে মাছের পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষুদ্র জলজপ্রাণী বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কা করছে সচেতন মহল। বিলচলন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকতার হোসেন জানান, সিথী ট্রেডার্সের নামে মাছ ধরার উপকরণ প্রস্তুতকারক ও বিক্রয় প্রতিষ্ঠানকে ট্রেড লাইসেন্স আমার দেওয়া। তবে মালিক সুশান্ত হালদার যে এই ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চায়না দুয়ারী জাল তৈরি করছেন তা আমার জানা নেই। চাটমোহর ইউএনও রেদুয়ানুল হালিম বলেন, বিষয়টি মূলত মৎস্য কর্মকর্তা দেখভাল করার কথা, তবু আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখব। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, চায়না দুয়ারী জাল তৈরি, ব্যবহার, বিপণন, পরিবহন নিষিদ্ধ। পাবনায় এ ধরনের জাল প্রস্তুত হচ্ছে বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।