বুধবার, ১০ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

শতাধিক ঘরবাড়ি তিস্তাগর্ভে

ঠিকানা হারিয়ে কাঁদছেন নদীপারের বাসিন্দারা

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

শতাধিক ঘরবাড়ি তিস্তাগর্ভে

লালমনিরহাটে তিস্তার ভাঙন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পানি কমলেও লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলার ভাঙন বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তর ডাউয়াবাড়ী গ্রামের ১৮ট বসতভিটাসহ শতাধিক ঘরবাড়ি তিস্তা নদীতে হারিয়ে গেছে। আপন ঠিকানা হারিয়ে কাঁদছেন নদীপারের বাসিন্দারা।

স্থানীয়রা জানান, তিস্তা, ধরলা নদী ও সানিয়াজান নদ বেষ্টিত লালমনিরহাট জেলা। এর পাঁচটি উপজেলা দুই দিকে ঘিরে রেখেছে তিস্তা-ধরলা। চলতি মৌসুমে হাতীবান্ধার ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত বসতভিটা তিস্তায় বিলীন হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এ ইউনিয়নের উত্তর ডাউয়াবাড়ী গ্রামের ১৮ পরিবারের বসতভিটা বিলীন হয়েছে তিস্তায়। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবার ঘরবাড়ি সরিয়ে নিলেও তা রাখার মতো স্থায়ী উঁচু জায়গা মিলছে না। মোটা অঙ্কের টাকা দিলে বার্ষিক লিজ বা ভাড়ায় মিলছে; যা বেশির ভাগ মানুষের সাধ্যের বাইরে। উত্তর ডাউয়াবাড়ী গ্রামে নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোকে অস্থায়ীভাবে বসতি গড়তে আপাতত আলহাজ আছের মাহমুদ সরকারি গণনিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠ ছেড়ে দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। এতে ক্ষতিগ্রস্তরা আপাতত বিদ্যালয় মাঠে পাচ্ছেন মাথা গোঁজার ঠাঁই। তবে বেশির ভাগই জায়গা না পেয়ে নদীতীরবর্তী বিভিন্ন সড়ক ও বাঁধের ধারে ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র স্তূপ করে রেখেছেন। তারা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। শুধু হাতীবান্ধা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নই নয়, পাটগ্রামের দহগ্রাম, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার নদীতীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনঝুঁকিতে পড়েছে হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ এলাকার চ-ীমারী বাঁধ, তালেব মোড়ের ওয়াপদা বাঁধ, হাতীবান্ধা বাইপাস সড়ক, আদিতমারীর মহিষখোচার বাঁধসহ বিভিন্ন এলাকা। উত্তর ডাউয়াবাড়ী গ্রামের নুরুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার, আবদুর রশিদ, শাহাবুদ্দিন ও জয়নুল হক বলেন, ‘২৪ ঘণ্টায় আমাদের পাড়ার ১৮ পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। বাকিগুলোও ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে। রাতে ঘুমাতে পারিনি। তবে সরাতেই হয়েছে ঘর। এখন নতুন করে ঘরবাড়ি করার মতো কোনো জমি নেই আমাদের।’ একই গ্রামের আতাউর রহমান বলেন, ‘চোখের সামনে বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। বুক ফেটে যায় সেই দৃশ্যের কথা মনে হলে। নিজের জমি-বাড়ি ছিল। এখন বাড়ি করার মতো এক টুকরো জমিও রইল না। আমরা ত্রাণ নয়, চাই তিস্তার স্থায়ী বাঁধ।’ লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, ‘স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করে পাঠাতে বলা হয়েছে। তালিকা ও বরাদ্দ এলে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষায় কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর