বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

দুই মাসে মারা গেছে দেড় হাজার গরু

♦ জয়পুরহাটে লাম্পি স্কিন রোগ নিয়ে বিপাকে কৃষক ♦ এ সুযোগে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন হাতুড়ে কিছু পশুচিকিৎসক

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

জয়পুরহাটে দুই মাসে দেড় হাজারের বেশি গরু মারা গেছে বলে জানা গেছে। লাম্পি স্কিন রোগে এসব গরু মারা গেছে। প্রতিদিন গৃহস্থ ও খামারির ঘরে ঘরে এ রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বাড়ছে। রোগ নির্মূলে কোনো চিকিৎসাও মিলছে না পশু হাসপাতালগুলোতে। চিকিৎসকদের ওপর আস্থা হারিয়ে হোমিও হলগুলোতে ঝুঁকছেন গৃহস্থ ও খামারিরা। গত দুই মাসে এ জেলায় দেড় হাজারের বেশি গরু মারা যাওয়ার কথা জানিয়েছেন গ্রাম্য পশু চিকিৎসকরা। জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের কর্মকর্তারাও লাম্পি স্কিন রোগে গরু মারা যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে কত সংখ্যক গরু মারা গেছে সঠিক তথ্য জানাতে পারেননি প্রাণিসম্পদ দফতরের কর্মকর্তারা।

খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এপ্রিল মাস থেকে গরু এ রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করে। মে মাসে ব্যাপক আকার ধারণ করে। প্রতিটি গ্রামে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রাম্য চিকিৎসকরা প্রতিদিন আক্রান্ত গরুর চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। কৃষক ও খামারিরা আক্রান্ত গরু প্রাণিসম্পদ দফতরে নিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছেন। দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে। আক্রান্ত গরুকে চিকিৎসা দিয়েও বাঁচানো যাচ্ছে না। এপ্রিল ও মে মাসে দেড় হাজারেরও বেশি গরু মারা গেছে। মারা যাওয়া বেশির ভাগই বিদেশি জাতের বাছুর। এখনো হাজার হাজার গরু ও বাছুর আক্রান্ত রয়েছে। প্রাণিসম্পদ দফতর থেকে আক্রান্ত গরুকে পক্স ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। এতে তেমন কাজ করছে না। যদিও বাজারে গরুর ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে, তবে সরবরাহ কমের অজুহাতে দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে। গৃহস্থ ও খামারিরা পশু হাসপাতালের চিকিৎসার ওপর আস্থা হারিয়ে গরু বাঁচাতে ছুটছেন স্থানীয় হোমিও হলগুলোতে।

আক্কেলপুরের তিলকপুর এলাকার গ্রাম্য পশু চিকিৎসক আবু হাসান বলেন, দুই মাসে জেলায় দেড় হাজারের বেশি গরু মারা গেছে। যার হিসাব সরকারের খাতায় পাওয়া যাবে না।’ কালাই উপজেলার শাইলগুন গ্রামের উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ‘আমার তিনটি বাছুর গরু রয়েছে। তিনটিই লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছিল। আক্রান্ত গরুর সংখ্যা বেশি বলে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে এলাকার কিছু হাতুড়ে পশু চিকিৎসক খামারি ও গৃহস্থদের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। যেমন তেমন চিকিৎসা দিয়ে গুনতে হচ্ছে ৫০০-১০০০ টাকা। কালাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাসান আলী বলেন, ‘প্রতিদিনই লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু ও গরুর বাছুর আসছে। এসব আক্রান্ত গরুর চিকিৎসার পাশাপাশি গরুর মালিকদের সচেতন করা হচ্ছে। লাম্পি স্কিন আক্রান্ত গরু মারাও যাচ্ছে। পশু হাসপাতালের ওপর আস্থা হারিয়ে খামারি ও গৃহস্থরা হোমিও হলগুলোতে ঝুঁকেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগাক্রান্ত গরুর সংখ্যা বেশি। সে কারণে যেতেই পারে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মহির উদ্দিন বলেন, ‘গরুর লাম্পি স্কিন রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। চিকিৎসায় ২৭ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে আক্রান্ত গরু সুস্থ হচ্ছে। তবে ভুল চিকিৎসায় কিছু গরু মারা যাচ্ছে। গরু মারা যাওয়ার সঠিক তথ্য আমাদের কাছে নেই।

কালাইয়ে ফাহিম হোমিও হলের চিকিৎসক কামরুল হাসান বলেন, ‘লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গবাদি পশুর চিকিৎসা নিতে প্রতিদিন অনেকেই আসছেন। আর্সেনিক অ্যালবাম, মেলেনড্রিনাম, অ্যাপিসমেল ওয়ান এম সঙ্গে বেলেডোনা ও রাজস্টক ওয়ান এম ডোজে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অধিকাংশ গরুই ভালো হচ্ছে। যাদের অবস্থা একেবারে খারাপ হয়েছে সেসব গরুর মধ্যে দু-একটি মারা গেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ শতাধিক পশুর চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর