শুক্রবার, ১৯ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

পদ্মার ভাঙন বিলীন বাড়িঘর

অবৈধ বালু তোলায় হুমকিতে শহররক্ষা বাঁধ

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

পদ্মার ভাঙন বিলীন বাড়িঘর

ফরিদপুরের ধলার মোড়ের কাছে পালডাঙ্গীতে পদ্মা নদীতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এক রাতেই শহররক্ষা বাঁধসংলগ্ন ১০-১২টি বসতবাড়ি ধসে গেছে। এতে শহররক্ষা বাঁধ চরম ঝুঁকিতে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, নদীতে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলায় এত তীব্র ভাঙন।

সরেজমিনে সদর উপজেলার ডিক্রির চর ইউনিয়নের পালডাঙ্গীতে দেখা যায়, শহররক্ষা বাঁধের কাছে পদ্মা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। সেখানে সরকারি বালুমহাল না থাকলেও ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল মজুদ। স্থানীয়রা জানান, ভেকু দিয়ে শহররক্ষা বাঁধ ঘেঁষে ৪০-৫০ ফুট গভীর করে বালু তুলে মজুদ করা হয়। ড্রেজার বসিয়ে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার শহররক্ষা বাঁধসংলগ্ন এলাকায় পানির ঘূর্ণি স্রোতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। মাঝরাত থেকে ভোর হওয়ার আগেই আফজাল শেখ, মজলু শিকদার, হাসান মাস্টার, বাদশা শেখ, সাহেব শেখ, আলী, দেলোয়ার শেখ, সাদ্দাম শেখ, সালাম শেখ, জাহানারা বেগমের ঘরবাড়ি পানিতে ধসে যায়। বাড়িঘর ছাড়াও বাঁশবাগান ও বেশ কিছু গাছপালা পানিতে ধসে গেছে। পালডাঙ্গী মামুনের দোকানের কাছে ভাঙন একেবারে শহররক্ষা বাঁধ পর্যন্ত চলে এসেছে। ভাঙনে ঘরবাড়ি হারানো হাসান মাস্টার বলেন, ‘১৯৮৮ সালের বন্যার সময় পদ্মা নদীতে ঘরবাড়ি হারানোর পরে আমরা এ বেড়িবাঁধের পাশে সরকারি জমিতে এসে আশ্রয় নিই। এরপর স্থানীয় প্রাসনের অনুমতি নিয়ে এখানে ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করছি। কিন্তু স্থানীয় এক ব্যক্তি এখানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করছে। শহররক্ষা বাঁধসংলগ্ন এলাকা থেকে বালু তোলার কারণে আমাদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রতিবাদ করায় উল্টো হুমকি দিচ্ছে তারা।’ শহররক্ষা বাঁধসংলগ্ন এসব ঘরবাড়ি হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন বসতিরা। অনেকের টয়লেট ও রান্নাঘর বিলীন হওয়ায় নিত্যকর্মও সারতে পারছেন না। বাড়িতে রান্নাবান্না করতে পারছেন না। এসব পরিবার সারা দিন নাওয়াখাওয়া বাদ দিয়ে ঘরের মালামাল সরাতে ব্যস্ত। স্থানীয়রা ওই বালুদস্যুদের ব্যবহৃত এক্সক্যাভেটর তথা ভেকু আটকে রাখেন সড়কে। তারা এভাবে বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করলে তাদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে হুমকিধমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশের পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নদীতে বসতভিটা ভাঙনের কবলে পড়ায় তারা চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আফজাল শেখ বলেন, ‘রাতে ভেকু দিয়ে লেয়ার ধরে বালু তুলে নিয়ে যায়। তার জন্য আমাদের ঘরদুয়ার সব ভাইঙ্গা নিয়ে গেছে। পায়খানা-পেশাব করব সেই কায়দাও নাই। টিউবওয়েল নাই, পায়খানা নাই, রান্নার জায়গাও নাই। সব ভাইঙ্গা নিয়ে গেছে।’

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থপ্রতিম সাহা বলেন, ‘খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। সেখানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর