জনবল সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত নওগাঁর পত্নীতলা মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল (ম্যাটস)। চার বছর পেরিয়ে গেলেও ১২টি শিক্ষক পদের সবই শূন্য রয়েছে। শিক্ষার্থীদের যথাযথ চিকিৎসাজ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠানটির ল্যাবে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষা সরঞ্জাম। অনেকটা জোড়াতালি দিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। পাঠ্য বিষয় আলাদা হলেও চার ব্যাচের শিক্ষার্থীদের একসঙ্গে ক্লাস নেন অধ্যক্ষ সপ্তাহে এক-দুই দিন। গেস্ট শিক্ষকরা ঠিকমতো আসেন না। ফলে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যক্ষসহ ১৩ শিক্ষকের অনুমোদিত পদ রয়েছে। এর মথ্যে ১২ শিক্ষকের কোনো পদেই এখন পর্যন্ত নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অধ্যক্ষ এবং দুজন ডাক্তার অ্যাটাচমেন্টে নিয়োগ আছেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা। পত্নীতলা হেলথ কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ও অন্য প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক এখানে এসে মাঝে মাঝে ক্লাস নিয়ে যান।
শিক্ষার্থী জানায়, এখানে সুইপার, ক্লিনার, বুয়া, আয়া পর্যন্ত নেই। আমাদের থাকা-খাওয়াও খুব সমস্যা হচ্ছে। পুরো ভবন এলাকা জঙ্গলে পরিণতি হয়েছে। রাতে সাপ চলে আসে বেডের নিচে। নিয়মিত ক্লাস হয় না। ল্যাব ফ্যাসিলিটি তেমন নেই, লাইব্রেরি নেই। চিকিৎসাজ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের জন্য তাদের ব্যবহারিক শিক্ষা কার্যক্রম চরম ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় তারা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। এখানে পড়ে কী শিখবে, বাস্তব জীবনে কী করবে দুশ্চিতায় ভুগছে শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, আমরা যদি সঠিক শিক্ষা অর্জন করতে না পারি বাস্তবে আমরা মানুষের কী সেবা দিব। মহিলা হোস্টেলে হোস্টেল সুপার বা কেয়ার টেকার নাই। এখানে মেয়েদের ভর্তি করিয়ে অভিভাবকরাও আছেন দুশ্চিতায়। কোনো সিকিউরিটি নাই। শিক্ষার্থী ছাড়াও বাইরের ছেলে মেয়েদের অবাধে আসা-যাওয়া চলে এখানে। কোনো কোনো দিন রাতভর মূল ফটক খোলা থাকে। জানা গেছে, ২২ কোটি ৯৬ লাখ ৬৮ হাজার টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর পত্নীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার পুঁইয়া এলাকায় পত্নীতলা ম্যাটসের অবকাঠামো নির্মাণ করে। ২০২১ সালে তিন তলা বিশিষ্ট একটি একাডেমিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন, ছাত্রছাত্রীদের জন্য দুটি আবাসিক হল, অধ্যক্ষ ও অন্যান্য শিক্ষকদের জন্য দ্বিতল ভবন বিশিষ্ট দুটি কোয়ার্টার ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০২১ সালে ৫২ আসন বিশিষ্ট চার বছর মেয়াদি কোর্সে ওই বছরই প্রতিষ্ঠানটিতে ভর্তি ও শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৪ ব্যাচে ১৬৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। পত্নীতলা ম্যাটসের অধ্যক্ষ ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে শুধু ভবনই আছে। বলতে গেলে কোনো জনবলই নেই। কোনো বাজেট বা বরাদ্দ নেই। খুব সমস্যার মধ্য দিয়েই চলছে প্রতিষ্ঠানটি। আমি এখানে সংযুক্তভাবে নিয়োগ আছি। যারা এখানে পাঠদান করাচ্ছেন তারা সবাই অন পেইড (টাকার বিনিময়ে) অতিথি শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ৪৯ জন লোকবল নিয়োগের জন্য চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার পপি খাতুন বলেন, ম্যাটসের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনে উপজেলা পরিষদ থেকে ২ লাখ টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
