রবিবার, ২১ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

খানাখন্দ ৭০ ভাগ সড়কেই

প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা, ভোগান্তিতে পথচারী চালক

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

খানাখন্দ ৭০ ভাগ সড়কেই

বাগেরহাটে বেহাল সড়ক -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাগেরহাট জেলা শহরের অধিকাংশ সড়কই খানাখন্দে ভরা। বছরের পর বছর ধরে যান চলাচলের অনুপোযোগী দেশের প্রথম শ্রেণির এ পৌরসভায় ৭৮ দশমিক ৩০ কিলোমিটার সড়ক। এর ৭০ ভাগই এখন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। অধিকাংশ সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী ভাঙাচোরা সড়ক দিয়ে চলাচল করতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানায়, ১৯৫৮ সালে বাগেরহাট পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৫ দশমিক ৮৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৌরসভাটি ১৯৯১ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হয়। এ পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ১৭টি মহল্লায় বর্তমানে বসবাস করেন প্রায় দেড় লাখ মানুষ। জেলা সদর হওয়ায় ৯টি উপজেলায় মানুষকে প্রতিনিয়ত বাগেরহাট শহরে আসতে হয়। এক দশকেরও অধিক সময় ধরে এ পৌরসভার সড়কের অধিকাংশই সংস্কার করা হয়নি। সড়কজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী ভাঙাচোরা এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করতে সাধারণ মানুষের প্রতিনিয়ত ভোগান্তি শিকার হতে হচ্ছে।

পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শহরের নূর মসজিদ থেকে এলজিইডি মোড়, রাহাতের মোড় থেকে চানমারী ব্রিজ, পুরাতন বাজার থেকে সম্মিলনী স্কুল, নূর মসজিদ থেকে সরকারি মহিলা কলেজ রোড, মুনিগঞ্জ থেকে হাড়িখালী রোড, সরকারি বালিকা বিদ্যালয় রোডসহ প্রধান প্রধান অধিকাংশ সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা, খারদ্বার, বাসাবাটী, সাহাপাড়া, দশানী, গোবরদিয়া, সোনাতলা, সরুই এলাকার রাস্তাঘাট নাজুক অবস্থায় রয়েছে। শহরের ইজিবাইক চালক ফরিদ বলেন, এই নূর মসজিদের মোড় থেকে এলজিইডি মোড় পর্যন্ত আমাদের ইজিবাইক নিয়ে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এতে যাত্রীদের কষ্ট হয়, আমাদেরও কষ্ট হয়, গাড়িরও ক্ষতি হয়। গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। শহরের অধিকাংশ সড়ক এখন অটোরিকশা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আগের তুলনায় যাত্রী অনেক কমে গেছে। না পারতে কেউ আর অটোতে উঠতে চায় না। সড়কে বের হলেই ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। অটোরিকশা প্রায়ই নষ্ট হয়। তারপরেও পেটের টানে বাধ্য হয়ে অটো চালাচ্ছি। আমরা চাই দ্রুত যাতে এই সড়কগুলো মেরামত করা হয়।

মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী, সদর উপজেলার কাড়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা সুমন শেখ বলেন, জরুরি প্রয়োজনে প্রতিদিনই শহরে আসতে হয়। কিন্তু রাস্তাঘাটের যে অবস্থা তাতে হাঁটাচলা করতেও কষ্ট হয়।

শিক্ষক আবু সাঈদ শুনু বলেন, বাগেরহাট পৌরসভার রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ, বিষয়টি বলারও কেউ নেই, দেখারও কেউ নেই।

বাগেরহাট জেলা হাসপাতালের সামনে সেলুন মালিক সুনীল শীল বলেন, কিছুদিন আগেও এই ভাঙা রাস্তায় ভ্যান উল্টে পড়ে গিয়ে এক গর্ভবতী নারী খুব কষ্ট পেয়েছে, তাকে হাসপাতালে নেওয়া লেগেছে। এমন দুর্ঘটনা প্রায়ই এ সড়কে ঘটেছে। এ ছাড়া রাস্তাঘাট খারাপ হওয়ার কারণে আমার সেলুন ও আশপাশের দোকানগুলোতে কাস্টমার আসতে চায় না। আমরা এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই। বাগেরহাট বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর তালুকদার আবদুল বাকী বলেন, বাগেরহাট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল পৌরসভার আওতাধীন। দীর্ঘদিন কোনো প্রকার সংস্কার কাজ না করায় টার্মিনালের ভিতরের রাস্তাগুলোয় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ক্ষতি হচ্ছে। আমরা মালিক সমিতি সমস্যা সমাধানে একাধিকবার ইট, বালি দিয়ে ভাঙা স্থান মেরামত করেছি। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার একই অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে খারাপ অবস্থায় থাকা সড়কগুলো নিয়ে মিডিয়ার সামনে কথা বলতে চাননি পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান। তবে তিনি বলেন, দ্রুতই পৌরসভার প্রধান ১১টি সড়কসহ ভাঙাচোরা সড়ক সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর